দুদকের অভিযান
অনলাইন টিকিটে কালোবাজারিসহ অনিয়মে পূর্ণ দেশের ৯ ট্রেন স্টেশন
ঈদের ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি, যাত্রীসেবা ও অবকাঠামোগত কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাজধানীসহ ৯টি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযানকালে ‘সহজ ডট কমের’ সার্ভার পর্যালোচনায় ভিআইপি কোটার বাইরেও অতিরিক্ত টিকিটও ব্লক করে রাখার প্রমাণ মিলেছে।
বুধবার (২৮মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৯টি কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
যেসব রেল স্টেশনের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে- ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, রংপুর রেলওয়ে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে, দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে, জামালপুর রেলওয়ে, ময়মনসিংহ রেলওয়ে, সিলেট রেলওয়ে, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে একযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কোনো কোনো রেলস্টেশনে ছদ্মবেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
অভিযানে বিষয়ে দুদক জানায়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পরিচালিত অভিযানে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ব্লক করে রাখার তথ্য উদঘাটন করে দুদক টিম। ‘সহজ ডট কমের’ রেল সংশ্লিষ্ট সার্ভার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভিআইপি কোটার বাইরে অনুরোধের ভিত্তিতে অতিরিক্ত টিকিটও ব্লক করে রাখা সম্ভব হচ্ছে। ৬ জুন তারিখের টিকিট বিক্রয় সংক্রান্ত সার্ভার রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযানকালে স্টেশনে অবস্থানরত যাত্রী ও অন্যান্যদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামাগারের অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া স্টেশনে অবস্থানরত ও যাত্রারত যাত্রীদের জন্য খাবার পানি সরবরাহের কলগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। অধিকন্তু ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ইজারা পদ্ধতিতে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে যেখানে অতিরিক্ত মূল্য প্রদান করতে হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। অনবোর্ড ট্রেন (বনলতা এক্সপ্রেস)- যাত্রীসেবা ও অন্যান্য সুবিধাদি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ট্রেনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাটেনডেন্টের অনুপস্থিতি রয়েছে এবং বরাদ্দকৃত টয়লেট টিস্যু ও সাবান প্রদান করা হয়নি। এছাড়া খাবার গাড়ি পরিদর্শনে খাবার মান অনুযায়ী মূল্য অযৌক্তিক ও মাত্রাতিরিক্ত মর্মে টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়। এছাড়াও অভিযানকালে রেলওয়ে ডিজেল ওয়ার্কশপে বাজারমূল্যের থেকে অতিরিক্ত মূল্যে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
রাজশাহী স্টেশনে কালোবাজারি :
রাজশাহীতে ছদ্মবেশে টিকিট সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালিয়ে কালোবাজারে অনলাইন টিকিট বিক্রয়ের প্রমাণ পায় দুদক টিম। এছাড়া স্টেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং যাত্রীসেবা বাড়ানোর বিষয়ে স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সিলেট স্টেশনে ভুয়া বিল ও আত্মসাৎ :
সিলেট রেল স্টেশনে যাত্রীসেবার নামে মাসে ৭০ লাখ টাকা ভুয়া বিল তৈরি ও আত্মসাতের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রগতি এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে নিয়োজিত কর্মীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠে আসে। পুরাতন প্ল্যাটফর্ম ভেঙে পাওয়া রড বিক্রির টাকা আত্মসাৎ ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।
রংপুর স্টেশনে পরিত্যক্ত ওয়েটিং রুম :
রংপুর স্টেশনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়,অপরিচ্ছন্নতাসহ ৪টি ওয়েটিং রুমের মধ্যে ৩টি ওয়েটিং রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ওয়েটিংরুম খুলে রাখার ব্যবস্থা করা, বাথরুমসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য স্টেশন মাস্টারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে
চট্টগ্রাম স্টেশনে আরএনবি সদস্যদের যোগসাজশ :
চট্টগ্রামে ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ে টিকিট বিক্রয়ের প্রমাণ মেলে। স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরএনবি সদস্যদের বুকিং সহকারীদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে কালোবাজারি করার অভিযোগ উঠে আসে।
ময়মনসিংহে বিধি বহির্ভূত টিকিট ও অতিরিক্ত আদায় :
ময়মনসিংহ স্টেশনে ছদ্মবেশে তদন্তে দেখা যায়, বুকিং সহকারীদের কাছ থেকে বিধি বহির্ভূত টিকিট পাওয়া যাচ্ছে এবং বেসরকারি ট্রেনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
এছাড়া দিনাজপুরের পার্বতীপুর, জামালপুর সদর, এবং অন্যান্য স্টেশনেও অভিযান পরিচালনা করে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। অভিযানের সময় সংগৃহীত নথিপত্র ও সাক্ষ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক।
আরএম/এআইএস