এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে টানা বৃষ্টির পর চট্টগ্রামের ঈদের বাজারে গরু বিক্রি বেড়েছে। এবারের বাজারে ছোট গরুর চাহিদা বেশি, বাজারে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে; লাখের নিচে গরু মিলছে না।

বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের বাকি আছে মাত্র একদিন। শেষ মুহূর্ত হিসেবে সেভাবে বিক্রি হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) চট্টগ্রামের বিবিরহাট পশুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির জন্য ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। বাজারে এগুলোর বেচাকেনাও বেশি। দর্শনার্থীরা বড় গরু দেখতে জটলা করলেও বড় গরুর চাহিদা কম। ছোট গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা, মাঝারি আকারের গরু এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা এবং বড় গরুর দাম ওজন অনুসারে দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। তবে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেচাকেনা বেশি দেখা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের বিবিরহাটে গরু বিক্রি করতে আসা খামারি মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক বছর চট্টগ্রামে গরু আনা হয়। এখানে দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। এবার ১৩টি গরু এনেছি। এখন পর্যন্ত ৩টি বিক্রি হয়েছে। দুটি হয়েছে আজকে। বাকিগুলো নিয়ে টেনশন হচ্ছে। আজকে রাত ও আগামীকালের মধ্যে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

বিবিরহাটে গরু কিনতে আসা কলেজ শিক্ষক প্রফেসর ওহিদুল আলম বলেন, আমরা প্রতিবছর ঈদের আগের দিন বা দু'দিন আগে গরু কিনি। কারণ আগে কিনলে গরু রাখার জায়গা সংকট ও দেখভাল করতে কষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য আজ কিনতে আসলাম। বাজারে এক লাখ টাকার কমে গরু মেলানো কষ্ট।

গত ২৯ মে থেকে নগরীর পশুর হাটগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়। হাটে প্রচুর পশু আমদানি হয়েছে। তবে টানা বৃষ্টির কারণে পশুর হাটে প্রত্যাশিত ক্রেতা দেখা যায়নি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে মোড়ে মোড়ে অলিগলিতে সামিয়ানা টাঙিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে কোরবানির পশু। বিভিন্ন এগ্রো ফার্ম থেকে বিভিন্ন জাতের গরু, মহিষ এনে বিক্রি করা হচ্ছে সড়কের পাশের ছোট পরিসরের স্থানে। এসব স্টলকে ক্রেতারা নাম দিয়েছেন ‘ফুটপাথের পশুর হাট’।

বিক্রেতারা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ক্রেতার উপস্থিতি এতদিন কম ছিল। পাশাপাশি গরু-ছাগল রাখার জায়গা সংকটে অনেকে ঈদের এক দিন আগে কিনতে বেশি আগ্রহী। তবে বুধবার হাটে ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে বিক্রেতাদের মনে। বৃহস্পতিবার থেকে ক্রেতার ঢল নেমেছে এবং বিক্রির পরিমাণ বাড়বে— প্রত্যাশা বিক্রেতাদের।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সূত্র জানায়, নগরীর অভ্যন্তরে নির্ধারিত পশুর হাট কম। এর মধ্যে চসিকের ব্যবস্থাপনায় নগরে ১৩টি হাট বসেছে। এর বাইরে ২১৫টি হাট বসেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়। নগরে ১০টি অস্থায়ী ও তিনটি স্থায়ী কোরবানির পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে— সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তার পাড় ছাগলের বাজার। নগরে পশুর হাটকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে জানায় সিএমপি। বিভিন্ন হাটের প্রবেশপথে মোতায়েন আছে পুলিশ। তা ছাড়া পুলিশের নিয়মিত টহলের পাশাপাশি র‌্যাবের টহলও বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে এক সপ্তাহ ধরে ক্রেতা সমাগম কম থাকলেও বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে যায়। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই অলিগলির পাশাপাশি বিবিরহাট, সাগরিকা গরুর বাজার, মইজ্যারটেকসহ বিভিন্ন পশুর হাটে ক্রেতা উপস্থিতি বেড়েছে। দুপুরে সড়কগুলোতে দেখা যায় গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন প্রচুর ক্রেতা। বরাবরের মতো পথে পথে গরুর দাম জিজ্ঞেস করছেন ক্রেতারা। বাজারে ক্রেতাদের বরাবরের মতো আগ্রহ বেশি দেখা গেছে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুতে।

বিক্রেতারা জানান, এবার চট্টগ্রামের পশুর হাটে কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু এনেছেন বেপারিরা। সাগরিকা, কর্ণফুলী ও বিবিরহাটের বাজারে এরই মধ্যে ব্যাপক সংখ্যক গরু এসে পৌঁছেছে। প্রচুর পরিমাণ গরু এনেছেন বেপারিরা। নগরের মুরাদপুর এলাকার বিবিরহাট অন্যতম বড় পশু বাজার।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি। এবার ৮ হাজার ৫২৩টি বেশি গবাদিপশু উৎপাদিত হয়। কিন্তু এরপরও স্থানীয় উৎপাদনে চাহিদা মিটবে না। এবার চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। চাহিদা অনুযায়ী এবার ঘাটতি আছে ৩৫ হাজার ৩৮৭টি কোরবানির পশুর। তবে চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন কম হলেও শেষ পর্যন্ত পশুর সংকট থাকবে না। চট্টগ্রামের বাইরে থেকে প্রচুর গবাদিপশু আনা হয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী বাজারে।

আরএমএন/এমজে