পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনের পুরোনো ছবি

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে টানা ১৬ দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মীরা। অবশেষে সেই কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের লিখিত আশ্বাসে গতকাল বৃহস্পতিবার আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন তারা। তবে, আদৌ কি তাদের সংকটের সমাধান হয়েছে?

সাত দফা দাবিতে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার শুরু করে দমন-পীড়ন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও। বিদ্যুৎখাত অস্থিতিশীল করার অভিযোগে গত বছরের ১৭ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০ কর্মকর্তাকে আসামি করে ঢাকার খিলক্ষেত থানায় মামলা করা হয়। পাশাপাশি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে করা হয় বদলি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অ্যাসোসিয়েশনের জানায়, গত চার মাসে হয়রানিরমূলক বদলির শিকার হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার কর্মী। এর মধ্যে লাইনক্রু প্রায় ৬৭৩ জন, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ৫৮৯ জন, ইসি ২৯০ জন, পিউসি ১২১ জন, বিলিং সুপারভাইজার ৩০৮ জন, এজিএম ৫৮০ জন, ডিজিএম ১৭৯ জন, সিনিয়র জিএম/জিএম ৩৬ জন এবং অন্যান্য রয়েছে ৯০৭ জন। গণবদলির কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে পবিসকে হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে আরইবির এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সহযোগিতা চাওয়া হলেও তেমন সুফল পাওয়া যায়নি।

সংগঠনটি আরও জানায়, গণবদলির কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে পবিসকে হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে আরইবির এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সহযোগিতা চাওয়া হলেও তেমন সুফল পাওয়া যায়নি।

তবে পবিসের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিগত সরকার একটি কমিটি গঠন করেছিল। যদিও সে কমিটি কোনো সমাধানমূলক সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির র্কমসূচি পুরোনো ছবি

এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারের নেতৃত্বে গত বছরের ২৩ অক্টোবর একটি কমিটি গঠন করে, যার দায়িত্ব ছিল পল্লী বিদ্যুৎ কাঠামো পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা তৈরি করে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া। তবে ৭ মাসেও কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ জুন) মন্ত্রণালয়ের যে আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা এলো তাতেও বলা হয়, পবিসের দাবি পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যও একটি কমিটি গঠন করা হবে। সব মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল এবং সংযুক্ত ও সাময়িক বরখাস্তকৃত ও অন্যায়ভাবে বদলিকৃত কর্মীদের পদায়নের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের এসব ঘোষণায় আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। তবে আদতে আন্দোলনের পুরোপুরি সমাপ্তি কী ঘটেছে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আপাতত কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু দাপ্তরিক কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে, সেহেতু এ সময়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াটা অযৌক্তিক। এছাড়া আন্দোলনকারীদের বড় একটি অংশ রয়েছেন, যারা ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। দিনের পর দিনে আন্দোলনে অংশগ্রহণে নানাবিধ ভোগান্তিতে পড়েছিলেন তারা। যেহেতু কর্তৃপক্ষের লিখিত আশ্বাস পাওয়া গেছে, তাই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

তবে মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হলে বা বাস্তবায়ন না হলে আবারো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানানো হয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাময়িকভাবে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে আমাদের আক্ষেপটা থেকেই যায়। শহীদ মিনারে টানা ১৬ দিন আন্দোলন করা হলো, মন্ত্রণালয় চাইলে এ সিদ্ধান্ত আগেই নিতে পারতো। অথচ আমরা কাজ রেখে দিনের পর দিন আন্দোলন করে গেছি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত করেছি। যেহেতু তারা একটা ডেডলাইন দিয়েছে, এর মধ্যে আমরা আর কোনো আন্দোলনে যাবো না।

সার্বিক বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনকারীদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। আপাতত আর কোনো সমস্যা নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও স্বাভাবিক থাকবে। ওদের যে দাবিদাওয়া, সেটার প্রসেস কিছুটা সময়সাপেক্ষ। আমরা কমিটি গঠন করে সেসব দাবিদাওয়া পরীক্ষানিরীক্ষা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাত দফা দাবিতে গত ২১ মে থেকে টানা আন্দোলন করছিলেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ; এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি ও পবিস একীভূত করে অন্য বিতরণ সংস্থার মতো পুনর্গঠন; মিটার রিডার, লাইন শ্রমিক এবং পোষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করা; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল।

ওএফএ/এমএ