চট্টগ্রামে যুবলীগ নেতাকে অপহরণ, ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় জহির উদ্দিন মিন্টু (৫২) নামে এক যুবলীগ নেতাকে অপহরণ করে মারধর ও ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভোরে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের স্লুইস গেট এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। বর্তমানে ভুক্তভোগী মিন্টু চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা জাহেদ নামে একজনকে আটক করে সেনাবাহিনী। তবে পুলিশ জানিয়েছে সম্পৃক্ততা না থাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
ভুক্তভোগী জহির উদ্দিন উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব গাটিয়াডাঙ্গা এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, জহির উদ্দিন বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বুধবার (১১ জুন) রাতে তাকে বালু লাগবে বলে দুর্বৃত্তরা তাকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়ন এলাকায় যেতে বলেন। এসময় তিনি ভাই মো. সোহেলকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে সেখানে যান। সেখানে সোহেলকে মারধর করে জহির উদ্দিনকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
পরে জহিরের মোবাইল থেকে ফোন করে তার মাধ্যমে স্ত্রীর কাছে ৩০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করে অভিযুক্তরা। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি সেনাবাহিনী, র্যাব এবং পুলিশকে অবহিত করে। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ উদ্ধার অভিযানে যায়। অন্যদিকে প্রশাসনের তৎপরতা দেখে দুর্বৃত্তরা ভুক্তভোগী জহির উদ্দিনকে ফেলে চলে যায়। পরে বৃহস্পতিবার ভোরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগী জহির উদ্দিন মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে থেকে আমাকে কল করে জায়গা ভরাটের কথা বলে আসছিল একজন। বুধবার আমি জায়গাটি দেখতে গেলে সশস্ত্র কয়েকজন আমাকে ঘিরে মারধর করে এবং চোখ বেঁধে ফেলে। এসময় আমার ভাই পালিয়ে যান। তারা প্রথমে কিছুদূরে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে কারেন্টের শক দেয়। এরপর আমার মোবাইল থেকে আমার স্ত্রীর কাছে প্রথমে ৩০ লাখ, এরপর ২০ এবং সবশেষ ১৫ লাখ টাকা দাবি করে।
তিনি আরও বলেন, টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তারা আমাকে বলে গুলি করে মেরে ফেলবে। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি আমার হাতে দিয়ে বলে এগুলো ‘তুক’ ভরে দেব। একপর্যায়ে গুলিগুলো নিয়ে তারা আমাকে ফেলে চলে যায়। আজানের আওয়াজ পেলে আমি আস্তে আস্তে হাত এবং চোখের বাঁধন খুলে ফেলি। দূর থেকে দেখা একটি ব্রিক ফিল্ড টার্গেট করে আমি সড়কে যাই। ততক্ষণে একটি মসজিদ থেকে মুসল্লিরা বের হয়। আমি তাদের সহায়তা একটি অটোরিকশা ঠিক করে সাতকানিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিই।
কাঞ্চনা ফুলতলা এলাকায় পৌঁছালে সেখানে সেনাবাহিনী গাড়ি দেখে আমি তাদের কাছে গিয়ে ঘটনা খুলে বলি। তখন গাড়িতে জাহিদ নামে একজন আটক ছিলেন। সেনাবাহিনী লোকেরা আমাকে তাকে চিনি কি না জিজ্ঞেস করেন। আমি না উত্তর দিলে তাকে সম্ভবত ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি তিনিই আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং তিনি এলাকায় এরকম আরও ঘটনায় জড়িত।
আরও পড়ুন
মামলা করবেন কি না জানতে চাইলে ভুক্তভোগী বলেন, আমি ট্রমায় আছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ভয় হচ্ছে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বালু লাগবে বলে জহিরকে ডেকে নিয়ে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রশাসনের তৎপরতায় তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে আমরা মামলা রুজু করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআর/এমএন