মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষায় ‘স্বাধীনতা’ প্রকল্পের উদ্বোধন
ডিজিটাল যুগে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে প্রকল্প ‘স্বাধীনতা’।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে হোটেল ক্রাউন প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বক্তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। ভুয়া তথ্য, বিভ্রান্তিমূলক প্রচার এবং ডিজিটাল নিরক্ষরতার হুমকির দিক তুলে ধরে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও নাগরিক দায়িত্ব নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রকল্পটি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নেদারল্যান্ডস, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষা, তথ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এতে দেশের আটটি বিভাগের তরুণ, মানবাধিকার কর্মী, সিভিল সোসাইটি এবং মিডিয়া প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল গণতন্ত্র গড়ে তোলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান ও মিনিস্টার-কাউন্সেলর ড. মিখাল ক্রেইজা বলেন, আমরা সকলেই একটি মুক্ত সমাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। তরুণ, মানবাধিকার কর্মী এবং গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে ডিজিটাল সচেতনতা বৃদ্ধি করে এই প্রকল্প একটি সচেতন নাগরিক পরিসর গঠনে অবদান রাখবে।
তিনি অনলাইন এবং অফলাইনে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, মত ও চিন্তার স্বাধীনতা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি। এখানে জেন্ডার, শ্রেণি, ধর্ম, শারীরিক সক্ষমতা বা জাতিসত্তা নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের সেবা পাওয়ার অধিকার এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের সুযোগ নিশ্চিত হতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা না হলে গণতন্ত্র বিকাশ লাভ করতে পারে না। স্বাধীনতা প্রকল্পটি এই বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠিত।
বিশেষ অতিথি হিসেবে, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, একটি ডিজিটাল ফ্যাক্ট-চেকিং ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতের দক্ষতা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমাদের ভূয়া তথ্য থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে এবং অন্যায় দেখলে প্রশ্ন তোলার সাহস রাখতে হবে। প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে ন্যায়বিচারকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু নারীর বিরুদ্ধে নয়, এটি পুরো সমাজের বিরুদ্ধে সহিংসতা। তরুণদের, বিশেষ করে কিশোরী ও নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য; তাদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে হবে এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে যাতে তারা নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে আমাদের সবার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।
উদ্বোধনী আয়োজনে নারীর অধিকার সংগঠন, তরুণ সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মী, এবং সিভিল সোসাইটি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ পর্ব ছিল ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল আচরণ, তথ্য নিরাপত্তা এবং সবার জন্য সমানভাবে ডিজিটাল পরিসরে প্রবেশাধিকার নিয়ে গুরুত্ব সহকারে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক (রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রাম) বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রাম) মোহাম্মদ মাহীন নেওয়াজ চৌধুরীসহ অন্যান্য অংশীদার সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
জেইউ/এমএ