সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের প্রেস উইং ফ্যাক্ট।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে এক ফেসবুক পোস্টে মাসুদা ভাট্টির সাম্প্রতিক একটি ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযোগ জানানো হয়।

পোস্টে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত মাসুদা ভাট্টি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের ‘শান্তিরক্ষা মিশন বাতিল হচ্ছ’ শিরোনামে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে জাতিসংঘ একটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যাকে তিনি ‘জুলাই সন্ত্রাস’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ওই ভিডিওতে মাসুদা ভাট্টি দাবি করেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের পর রাখাইনে তথাকথিত “মানবিক করিডোর” নামে অস্ত্র পাঠানোর একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এছাড়াও, তিনি মিথ্যাভাবে জাতিসংঘের বাংলাদেশে রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর গুইন লুইসের নামে একটি বক্তব্যও তুলে ধরেন, যেখানে লুইস নাকি বলেছে— “কোনও রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলেও, জনগণ অংশ নিলে নির্বাচন বৈধ হবে।”

ভাট্টি আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাতে বসেছে এবং এটি বাতিলের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

তার ভিডিওর একটি অংশে মাসুদা ভাট্টি একটি ছবি উপস্থাপন করেন, যেখানে নাকি দেখা যাচ্ছে—বাংলাদেশের মাধ্যমে জাতিসংঘের অস্ত্র পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তু একটি রিভার্স ইমেজ সার্চে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ছবিটির বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ছবিটি মূলত শাটারস্টক থেকে নেওয়া, যার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে: “২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, ফিলিস্তিনি ট্রাকগুলো মানবিক সহায়তা বহন করে করেম শালোম সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।”

বিবিসিও একই ছবিটি ব্যবহার করেছে এবং তাদের ক্যাপশনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে ছবিটি গাজার জন্য মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত।

রাখাইনে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি করিডোর স্থাপন নিয়ে মাসুদা ভাট্টির দাবিও ইতোমধ্যে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ধরনের গুজবকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা” বলে অভিহিত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার মতে, ২০২৪ সালের মার্চে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফরের সময় তিনি একটি মানবিক সহায়তা করিডোরের প্রস্তাব দিলেও, সেটি কখনো প্রস্তাবের পর্যায় ছাড়িয়ে বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপসারণে জাতিসংঘ ষড়যন্ত্র করেছে—এ ধরনের অভিযোগ শুধু ভিত্তিহীনই নয়, বরং তা বাংলাদেশের লাখো মানুষের ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতি চরম অবমাননাকর।

জুলাই আন্দোলন কোনো বিদেশি শক্তির উসকানিতে নয়, বরং দীর্ঘদিনের দমন-পীড়ন, স্বৈরশাসন এবং রাষ্ট্রীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ হিসেবেই গড়ে উঠেছিল। এ পর্যন্ত এমন কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যা থেকে বোঝা যায়—জাতিসংঘ বা যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো বিদেশি শক্তি এই আন্দোলন উসকে দিয়েছে কিংবা নেতৃত্ব দিয়েছে।

গুইন লুইসের নির্বাচন সংক্রান্ত মন্তব্যকে মাসুদা ভাট্টি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা বিভ্রান্তিকর। ৪ জুন গুইন লুইস স্পষ্টভাবে বলেন: “আওয়ামী লীগ যদি আগামী নির্বাচনে অংশ না-ও নেয়, তবে যদি জনগণ সঠিকভাবে অংশ নিতে পারে, তাহলে সেটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, জাতিসংঘের দৃষ্টিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে হচ্ছে—প্রত্যেক বাংলাদেশি নাগরিক যেন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান এবং তাদের কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া যায়।

“বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাতে বসেছে” — এমন দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ বা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে তথ্য কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত মাসুদা ভাট্টিকে গুরুতর অসদাচরণের প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তবুও, তিনি ও তার মতাদর্শে বিশ্বাসী একটি ছোট দল বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম—বিশেষ করে ইউটিউব—ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও ঘৃণা উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এমএসআই/এআইএস