আকাশ ছোঁয়া সীমান্ত সড়ক : পর্ব ২
অপার সৌন্দর্যের সীমান্ত সড়ক : হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র
সাঁই সাঁই করে ছুটছে গাড়ি। গাড়ির জানালার একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে মেঘ। সর্পিল আকৃতির সড়ক বেয়ে গাড়ি উঠছে উপরের দিকে, তিন হাজার ফুটের বেশি উঁচুতে; যেখানে মেঘের শীতল পরশ বুলিয়ে দেয় শরীর; হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা যায় মেঘ। আশপাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। যেগুলোর চূড়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা মেঘ।
দার্জিলিং নয়, এটি বাংলাদেশের বান্দরবানের পূর্বপ্রান্তে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকার একটি দৃশ্য। এলাকাটির নাম বঙ্কুপাড়া, এটি থানচি উপজেলার মধ্যে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা শহর থেকে সেখানে গাড়িযোগে যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। বাংলাদেশের বড় বড় পাহাড়গুলো সেখানে অবস্থিত। দুর্গম এই এলাকায় সড়ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সেনাবাহিনী। সড়কের একপাশে মিয়ানমার, অন্যপাশে বাংলাদেশ।
প্রায় একইরকম একটি দর্শনীয় স্থান ভারতের মিজোরাম প্রদেশের পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার সাইচল এলাকা।
বিজ্ঞাপন
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলা সদর থেকে সীমান্ত সংযোগ সড়ক দিয়ে ফারুয়া হয়ে গাড়িযোগে এই এলাকায় পৌঁছাতে লাগবে প্রায় তিন ঘণ্টা। যাওয়ার আগে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে চূড়ায় ওঠার দৃশ্য চোখ জুড়াবে।
আরও পড়ুন
সাইচল এলাকার স্থানীয়রা জানান, একসময় এখানে কোনো সড়ক ছিল না। চিকিৎসা কিংবা কোনো কাজে জেলা শহর যেতে হলে পায়ে হেঁটে যেত হতো সবার। অসুস্থ হলে কাঁধে করে নিয়ে যেতে হতো। এখন সড়ক হয়েছে। এ কারণে মানুষের আসা-যাওয়া বেড়েছে। দুর্গম পাহাড়ে যারা বাস করত, তারা এখন সড়কের কাছাকাছি চলে এসেছে। তবে এখনও সেখানে কোনো পর্যটন স্পট গড়ে ওঠেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক হলেও পর্যটনের জন্য অবকাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরিবহন ব্যবস্থা এখনো হয়নি। তবে সরকার চাইলে উদ্যোগ নিতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ রকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন গড়ে তুলে আয় করছে বৈদেশিক মুদ্রা।
রাঙ্গামাটি কলেজের সাবেক ছাত্র ও জুরাছড়ি এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীপ চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে রাঙ্গামাটি সদরে আসা-যাওয়ায় প্রায় ৫ থেকে ৬ দিন লাগত। এখন সীমান্ত সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টায় আসা-যাওয়া করা যায়। এই এলাকায় ছবির মতো সুন্দর অনেক স্পট আছে। সড়ক হওয়ার পর এখন প্রশাসন পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারে৷
সম্প্রতি বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি এলাকার সীমান্তবর্তী সড়ক ঘুরে দেখেছেন জমির উদ্দিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ভারতের দার্জিলিং, শিলং আর কাশ্মির ঘুরেছি। বরফ ঢাকা উপত্যকা, হিমালয়ের কোলে গড়া পথে চলেছি। বাংলাদেশের দুর্গম পাহাড়ে সীমান্ত সড়কের সৌন্দর্য এর চেয়ে বেশি। যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে পর্যটন স্পট গড়ে তুললে সড়কটি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আন্তর্জাতিক পর্যটকের আনাগোনায় এটি বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে উঠবে।
সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের আওতাধীন ২০ ইসিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসিফ আহমেদ তানজিল বলেন, সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়কগুলোর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদ, সাজেক, নীলগিরির বাইরে বিভিন্ন নয়নাভিরাম স্পট পর্যটকদের জন্য উন্মোচিত হয়েছে।
সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামছুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমদিকে ২০১২ সালে আমি সাজেক গিয়েছিলাম। তখন এটা বসবাস কিংবা পর্যটকের জন্য নিরাপদ ছিল না। কিন্তু এখন একেবারেই নিরাপদ বলা চলে। সুতরাং সরকার চাইলে সব সম্ভব। এখন সীমান্ত সড়কে নানা স্পট চিহ্নিত হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে একজন পর্যটক ফেনী হয়ে রামগড়, তারপর সেখান থেকে শুরু করে তিন পার্বত্য জেলার সীমান্তবর্তী সড়ক দিয়ে ঘুমধুম পৌঁছাবে। সেখান থেকে পরবর্তীতে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে কক্সবাজার পৌঁছাতে পারবে।
দেশের নতুন পর্যটন স্পট নির্ধারণ নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। সংস্থাটির পরিচালক (বিপণন, পরিকল্পনা ও জনসংযোগ) সালেহা বিনতে সিরাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী সপ্তাহে রাঙ্গামাটির সাজেকে আমাদের একটা মিটিং আছে। যেখানে জেলা পরিষদ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা থাকবেন। তখন এই সড়কের সম্ভাব্য পর্যটন স্পট নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
এমআর/এমজে