চট্টগ্রামে হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) পটিয়ার একটি ঘটনা নিয়ে উত্তাল রয়েছে চট্টগ্রাম। এ ঘটনার জেরে বুধবার পটিয়া থানা ঘেরাও করেছে বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে দুপুর ৩টার দিকে তারা চট্টগ্রাম শহরে জড়ো হয়। নগরের খুলশী থানার চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় ঘেরাও করে স্লোগান দেওয়া শুরু করে। 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর ও পটিয়া এলাকায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। পটিয়ায় পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনীও। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের ডিআইজি কার্যালয় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ পুলিশ। 

এদিকে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ ও চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর জাকির হোসেন রোডে দীর্ঘ সময় ধরে চলা অবরোধে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন।

এর আগে রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দীপঙ্কর দেকে ধরে নিয়ে পটিয়া থানায় যায় এনসিপি ও বৈছাআর নেতাকর্মীরা। তারা দীপঙ্করকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দের কথা বলে। তখন পুলিশ দীপঙ্করে নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে কোনো মামলা না থাকায় গ্রেপ্তারে অস্বীকৃতি জানায়।

জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, শুরুতে ঘটনাস্থলে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এনসিপি ও বৈছাআর নেতাকর্মীরা থানার এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে থানায় ওসি পৌঁছান। তখন বিক্ষোভকারীরা ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারে তাকে চাপ দেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা থানা হাজতের পাশে চলে যান। সেখানে তখন অন্যান্য মামলার কয়েকজন আসামি ছিলেন। এ কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাজতের পাশ থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বাকবিতণ্ডা চরমে পৌঁছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও হাতে এসেছে প্রতিবেদকের। 

এদিকে, বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করে। পরে বিক্ষুব্ধ এনসিপি ও বৈছাআর নেতাকর্মীরা থানার বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা এবং ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় ৬ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করে বিক্ষোভকারীরা।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার (২ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সিনথিয়া জাহীন আয়েশা একটি বিবৃতি দেন। এতে তিনি বলেন, পটিয়ার ঘটনা পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতের স্পষ্ট উদাহরণ। নাগরিকের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার হরণ করা গণতন্ত্রবিরোধী কাজ। আমরা দায়িত্বশীলভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রশাসনিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায়ও থাকব।

তবে জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা মামলা না থাকলে আইনগতভাবে কাউকে গ্রেপ্তারের সুযোগ নেই। এটি আমরা তাদেরকে বুঝিয়েছি। কিন্তু শুরু থেকে তারা একটু মারমুখি মনে হয়েছে। এককথায় তারা পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।  

জাতীয় নাগরিক পার্টি চট্টগ্রামের মিডিয়া সেলের মুখপাত্র আরফাত আহমেদ রনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করতে বলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর পটিয়া থানা ওসির নেতৃত্বে বেধরক মারধর করা হয়। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। 

ওসির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে থানায় সোপর্দ করায় পটিয়ার ওসি বৈষম্যবিরোধীদের ওপর হামলা করেছে। ওসিকে অপসারণ করতে হবে।

ডিআইজির কাছ থেকে সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত না পেলে পুরো চট্টগ্রাম অবরোধ করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তারা।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে কিছু দাবির কথা জানিয়েছে। আমরা সেটি বিবেচনা করছি। আশা করি দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।

এমআর/এমজে