সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও টিস্যু রেল কর্তৃপক্ষের পেটে
বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘লাগেজ ভ্যান প্রকল্প’ বাস্তবায়নে যাত্রীসেবায় চরম অবহেলা ও সরকারের অর্থ অপচয়ের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ওই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি কোচের টয়লেটের জন্য বরাদ্দকৃত সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, টিস্যু, এয়ার ফ্রেশনার ইত্যাদি সামগ্রী বাস্তবে সরবরাহ না করলেও রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করে বিল উত্তোলন করার প্রমাণ মিলেছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২১জুলাই) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত এক এনফোর্সমেন্ট অভিযানে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো আক্তারুল ইসলাম বলেন, দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের দরপত্র ও কেনাকাটার নথিপত্র সংগ্রহ করে। একই সঙ্গে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও সেবার বাস্তব চিত্র পর্যবেক্ষণের জন্য কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
অভিযান সূত্রে জানা যায়, দুদক টিম পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পায়—প্রতিটি কোচের টয়লেটের জন্য বরাদ্দকৃত সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, টিস্যু, এয়ার ফ্রেশনার ইত্যাদি সামগ্রী বাস্তবে সরবরাহ করা হয়নি। অথচ সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি দিয়ে দেখানো হয়েছে যে, এসব সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে এবং ট্রেন পরিষ্কারের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
নমুনা হিসেবে পরিদর্শিত ট্রেন দুটির যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসি কোচে কিছু কনজিউমেবল পণ্য সরবরাহ করা হলেও নন-এসি কোচে প্রায় কিছুই থাকে না। বিশেষ করে টয়লেট পরিষ্কার না থাকা এবং ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
এনফোর্সমেন্ট টিম মনে করছে, এই ধরনের অনিয়ম শুধু ট্রেন দুইটিতে সীমাবদ্ধ নয়—বরং এটি রেলওয়ের অন্যান্য ট্রেন ও রুটেও একইভাবে ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি জনগণের প্রতি রেলওয়ের সেবাবোধের ঘাটতি স্পষ্ট হয়েছে।
আরও পড়ুন
দুদক জানায়, অভিযানের সময় সংগৃহীত সমস্ত নথিপত্র, পর্যবেক্ষণ ও যাত্রীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করে কমিশনের নিকট দাখিল করা হবে। পরবর্তীতে এই তদন্তের ভিত্তিতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হতে পারে।
দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নথিপত্রে পরিসেবা দেখিয়ে কাগজে কলমে দায়মুক্তি নেওয়ার প্রবণতা দুর্নীতির স্পষ্ট ইঙ্গিত। এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ
একইদিনে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, নোয়াখালী। অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির সাথে আলোচনার পাশাপাশি নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়।
দিনাজপুরে আউটসোর্সিং নিয়োগে অনিয়ম তদন্তে অভিযান
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডে জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করে দুদক। অভিযানে দরপত্র প্রক্রিয়ার রেকর্ড সংগ্রহসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করে টিম।
পার্বত্য অঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পেও দুর্নীতির অভিযোগ
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কফি ও কাজুবাদাম চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প’-এ দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদকের রাঙ্গামাটি কার্যালয়। প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে ছয়টি বাগান পরিদর্শন এবং উপকারভোগীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি অভিযানের ক্ষেত্রে সংগৃহীত নথিপত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে সংশ্লিষ্ট টিম।
আরএম/এমএ