ভোরের আগেই জমজমাট : দিনে ২০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয় যেখানে
ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। বৃষ্টি পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি। চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ মানুষ তখনও বিছানা ছেড়ে ওঠেনি। সড়কগুলো প্রায় গাড়ি শূন্য। চারদিকে সুনসান নীরবতা।
তবে নগরীর ফিশারি ঘাটের চিত্র ভিন্ন। ভোর হওয়ার আগে এখানে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম হয়েছে। জেলেরা নানা রকম মাছ নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন বহু ক্রেতাও। তারা এখান থেকে মাছ নিয়ে যাবেন সারা দেশে। কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষা এ বাজারে নদীর মাছের পাশাপাশি নানা সামুদ্রিক মাছও নিয়ে এসেছেন জেলেরা।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে ফিশারি ঘাট মাছের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানের সামনে রাখা আছে নানান রকম মাছের স্তূপ। চারপাশ ঘিরে আছেন ক্রেতারা। মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিলামে দাম হাঁকছেন বিক্রেতা। ক্রেতারা চুপ হয়ে গেলে সর্বোচ্চ দাম আবার বলছেন বিক্রেতা। ক্রেতারাও একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ধাপে ধাপে বাড়াচ্ছেন দাম।
আড়তদারেরা বলছেন, এভাবে দিনে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মাছ বেচাবিক্রি হয় ফিশারি ঘাটে।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম ফিশারি ঘাটে সামুদ্রিক লাক্ষা, ইলিশ, কোরাল, দাতিনা কোরাল, রেড স্ন্যাপার, ভেটকি, সুরমা, কাটল ফিশ, দেশি স্কুইড, রূপচাঁদা, ম্যাকরেল, টুনা, স্যালমন, সার্ডিন, স্কুইড, লবস্টার, টুনা কড, ছুরি, পোপা, ফাইস্যা, লইট্যা, চিংড়ি, চাপা, চাপিলা মাছ পাওয়া যায়।
শুধু সাগরের মাছ নয়, এখানে মেলে মিঠাপানির মাছও। বিভিন্ন উপজেলার পুকুর-খামার থেকে সংগ্রহ করা রুই, কাতল, বোয়াল, কই, মাগুর মাছও নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। আসে বার্মিজ মাছও। এরপর চলে বরফ দিয়ে সংরক্ষণের প্রস্তুতি। এজন্য এখানে গড়ে উঠেছে কোল্ড স্টোরেজও।
আড়তদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স বিমল সূত্রধরের ম্যানেজার শিমুল কান্তি বলেন, ‘ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গার পাইকারেরা এখানে আসেন। তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী মাছ নিয়ে যান। সবসময় সামুদ্রিক মাছের চাহিদা থাকে। আমাদের এখানে দিনে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। আর সব আড়তে দিনে ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার মাছ বেচা-কেনা হয়।’
আরেক আড়তদার নুরজাহান ফিশিংয়ের স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম বলেন, ‘সাগরের পরিবেশ এখন খারাপ, জেলেরা সমুদ্রে কম যাচ্ছে। তাই এখনও চাহিদা অনুযায়ী মাছ আসছে না। সেজন্য মাছের দর একটু বেশি।’
হাটহাজারী থেকে মাছ কিনতে আসা ব্যবসায়ী শফিক মিয়া বলেন, ‘ইলিশ আর সামুদ্রিক মাছের জন্য এসেছি। ইলিশের দাম একটু বেশি। ট্রাকে করে মাছ নিয়ে যাব। সেখানে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে।’
আরও পড়ুন
শুধু পাইকারি নয় ফিশারি ঘাট থেকে মাছ সংগ্রহ করেন বন্দরনগরীর খুচরা বিক্রেতারাও। আবার অনেক খুচরা ক্রেতাও ফিশারি ঘাটে পছন্দের মাছ কিনতে আসেন। মাছ কিনতে আসা পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, সামুদ্রিক তাজা মাছের জন্য এখানে আসা হয়। শহরের যেকোনো বাজারের চেয়ে এখানে কম দামে মাছ পাওয়া যায়। আজকে সামুদ্রিক কোরাল কিনেছি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের নতুন এই ফিশারি ঘাটে আড়ত রয়েছে প্রায় ২২০টি। পুরনো ফিশারি ঘাটে রয়েছে ৬৮টি আড়ত। তবে পুরনো বাজারের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এখন নতুন বাজারে আড়ত নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
এমআর/এমজে