সিলেট মেট্রোপলিটনের সাগরদীঘির পাড়ে ১ একর ১০ শতক জমির বৈধ মালিকানা থাকা সত্ত্বেও মালিকরা জমিতে প্রবেশ ও ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। জমিটির বর্তমান মালিক সামরান হোসেন চৌধুরী রাজুসহ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, ছয় মাস ধরে পুলিশ সেখানে পুলিশ সদস্যদের বসিয়ে জমি দখলে রেখেছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

শনিবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সামরান হোসেন চৌধুরী রাজু জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে হিমাংশু রঞ্জন গুপ্তের কাছ থেকে বৈধভাবে জমিটি কেনেন সামরান হোসেন চৌধুরী রাজুসহ আরও কয়েকজন। তবে ক্রয়ের সময় জমিটির ওপর এসটিএস গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দাবি ছিল, ওই গ্রুপটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি জানান, তারা ক্রয় করার আগেই হিমাংশু রঞ্জন গুপ্তের অভিযোগের ভিত্তিতে এসটিএস গ্রুপের দলিল বাতিল ঘোষণা করেন আদালত। তারপরও স্বৈরাচার সরকারের মন্ত্রী অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলে রেখেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সামরান হোসেন চৌধুরী বলেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের পর টিপু মুনশি জমি থেকে সরে গেলেও নতুন করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি পুলিশের একাংশকে ব্যবহার করে জমি পুনরায় দখলের চেষ্টা করছেন এবং মালিকদের হয়রানি করছেন।

এজন্য জমির কেয়ারটেকার দেলোয়ার ও তার স্ত্রী পারভিনকে দিয়ে প্রলোভনের মাধ্যমে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করানো হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি। সামরান দাবি করেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই প্রমাণিত হবে এটি সাজানো মামলা। এমনকি বাদী অতীতেও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থানায় একাধিক মিথ্যা মামলা করেছিলেন। জমির মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্টের একটি মিথ্যা মামলাও করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

সামরান হোসেন চৌধুরী বলেন, মূলত সেদিন নুরুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে পুলিশের সহযোগিতায় সন্ত্রাসীরা জমি দখলের জন্য হামলা চালায়। জমির মালিকরা সেখানে উপস্থিত না থাকলে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় আসামি করা হয় তাদের। এলাকাবাসীর সমর্থন থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ‘নিরাপত্তার অজুহাতে’ জমি দখল করে রেখেছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জমির প্রকৃত মালিক সামরান হোসেন চৌধুরী রাজু ও তার অংশীদাররা অবিলম্বে পুলিশ সরানোর দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, অপরাধপ্রবণ হওয়ায় ড্রিম সিটির পাশে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প আগে থেকেই ছিল। সেখানে অবকাঠামোগত কাজ চলছে। এজন্য পুলিশ সাময়িকভাবে ড্রিম সিটির দুটি রুমে অবস্থান করছে, তাও এলাকাবাসী পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করার পর থেকে। সেখানে কারো সম্পদ দখল করা পুলিশের কাজ নয়, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। উল্টো ওই স্থাপনায় ধর্ষণ, মাদক কারবারসহ কিশোর গ্যাংয়ের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠার অভিযোগ রয়েছে। এজন্যই পুলিশ সেখানে অবস্থান করছে সাময়িক সময়ের জন্য।

ওসি বলেন, ওই জমির মালিক ড্রিম সিটি নয়। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে মৎস্য অধিদপ্তর ও এসটিএস গ্রুপের মধ্যে মামলা চলছে।

এমএসি/এসএসএইচ