রাষ্ট্রীয় পাটকলের বদলি হওয়া শ্রমিকদের বকেয়া অবিলম্বে পরিশোধসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন করিম ও লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা। দাবি আদায় না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণাও দেন তারা।

রোববার (১৩ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমানে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে— নামের ভুল দ্রুত সংশোধন করে অবশিষ্ট স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা অবিলম্বে পরিশোধ করা; ২০১৯ সালের বকেয়া সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা; ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন অনুযায়ী গত ৪ বছরের ছুটি ও ৯টি বোনাস, চিকিৎসা-শিক্ষা ভাতার ডিফারেন্স, বৈশাখী ভাতার টাকা পরিশোধ করা; বেসরকারি পাটকলে ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা এবং রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ নয়, আধুনিকায়নসহ চালু করা ও ক্যাজুয়াল ভিত্তিতে নয়, বদলি/স্থায়ী হিসেবে পুরনো শ্রমিকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর ২০২০ সালের ২ জুলাই রাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলে উৎপাদন বন্ধের নোটিশ টাঙানো হয়। এতে এক ধাক্কায় প্রায় ৫৭ হাজার শ্রমিকের কর্মক্ষম হাতকে বেকারের হাতে পরিণত করা হয়েছে। শুধু শ্রমিক নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাটচাষি-পাটশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদার ও তাদের পরিবারসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ। সরকারি পাটকল বন্ধের সময় বলা হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকজনিত ক্ষতিপূরণসহ সব পাওনা মিটিয়ে দিয়ে পাটকলগুলো পুনরায় চালু করা হবে। কিন্তু এক বছর হতে চললেও এখনও সব স্থায়ী শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ হয়নি। বদলি শ্রমিকদের পাওনা দেওয়া এখনও শুরুই করা হয়নি। করোনা মহামারিজনিত লকডাউনের মধ্যে বিকল্প কাজ ও আয়ের অভাবে এই শ্রমিকদের দুর্দশা বর্ণনাতীত। 

তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের পেছনে সরকারের বড় অজুহাত লোকসান। কিন্তু কেন লোকসান, কাদের কারণে লোকসান, লোকসান কাটাতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল; সেসব প্রশ্নের উত্তর নেই। এর দায় কার, শ্রমিকের না কি ম্যানেজমেন্ট ও নীতি নির্ধারকদের, শ্রমিকরা একা কেন শাস্তি পাবে? এসব প্রশ্ন আমরা দেশবাসীর কাছে রাখতে চাই। পাটকে বলা হতো বাংলাদেশের সোনালি আঁশ। পরিবেশ সচেতনতার কারণে ক্ষতিকর পলিথিন-প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। চাল, গম, আটা, চিনিসহ ১৮টি পণ্যের মোড়কে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার আদেশ ‘ম্যানডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট ২০১০’ বাস্তবায়ন হলে দেশের বাজারে পাটের বিপুল চাহিদার সৃষ্টি হবে। ফলে পাটশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সম্ভাবনা আছে বলেই বেসরকারি পাটকলগুলো লাভ করছে। আমরা মনে করি, আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালু করলে ও লোকসানের কারণগুলো দূর করে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালনা করতে পারলে রাষ্ট্রীয় খাতে রেখেই পাটকলগুলো লাভজনক করা সম্ভব।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন করিম জুট মিলের শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ গোফরান, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জহিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য ফখরুদ্দিন কবির আতিক, করিম জুট মিলের শ্রমিকনেতা জাফর উল্লাহ, এরশাদ-উজ-জামান, লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি