মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অভিযোগের প্রমাণ না মেলার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ২৩টি সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম)।

তারা বলেছে, অতীতে সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচার করতে হবে এবং কোনোভাবেই যেন তারা নতুন করে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হতে না পারে। অতীতে সিন্ডিকেটসহ যেসব কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল সেগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং এর বদলে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছভাবে কর্মী পাঠানোর দাবি জানিয়েছে বিসিএসএম।

আজ (মঙ্গলবার) বিসিএসএম চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী এবং কো-চেয়ার সৈয়দ সাইফুল হকের সই করা বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। 

বিবৃ‌তি‌তে ১১ আগস্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত সাবেক সংসদ সদস্য লোটাস কামালের পরিবারসহ সাবেক তিন সংসদকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া, মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়াকিনি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায় যে, মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণে জড়িত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত স্থগিত করার মালয়েশিয়ার অনুরোধে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে।

বিসিএসএম এসব খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তি না দেওয়া এবং অভিযোগের পুনঃতদন্ত এবং বিচারিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছে। এ ছাড়া, এই সিন্ডিকেটের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের যে অভিযোগ আছে সেই আগ্রগতি সম্পর্কেও সাধারণ নাগরিকে অবহিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে বিসিএসএম। 

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং বিসিএসএম এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। 

সরকারের অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্রে, গণমাধ্যমে গত এক বছরে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর এবং দুদকের অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে একেকজন কর্মীর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত খরচের চেয়ে পাঁচ ছয়গুন বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে এবং কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে যার সঙ্গে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই সিন্ডিকেট জড়িত। এর আগেও ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দশজনের সিন্ডিকেট হয়েছিল এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে ঘিরে নানা অনিয়মের খবর নতুন নয়। কিন্তু কখনোই তাদের বিচার হয়নি। 

বিসিএসএম আশঙ্কা করছে, এখন এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা যদি জবাবদিহি ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই পায়, তবে একই ধরনের সিন্ডিকেট আবারও গড়ে উঠবে। বিসিএসএম আহবান জানাচ্ছে, ১১ থেকে ১৩ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ সফরে শ্রমবাজার উন্মোচন করতে যেয়ে সিন্ডিকেট নির্মূল করার বিষয়টি যেন গুরুত্ব না হারায়।  

বিসিএসএমে যুক্ত ২৩টি সংগঠন হচ্ছে— রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু), ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ), বাস্তব, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাসুগ-ডায়াসপোরা অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, রাইট যশোর, ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব অলটারনেটিভ ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (ইনাফি), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা), ইমা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড উড ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (বিসিডব্লিউডব্লিউএফ), ইয়ং  পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন (ইপসা), বোয়াফ, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন (ডেভকম) লিমিটেড, ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন, চেঞ্জ মেকারস, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (সিসিডিএ), কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অভ লেবার স্টাডিস (বিলস), বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র (বিএনএসকে)। 

এ ছাড়া, অভিবাসন নিয়ে সোচ্চার তিন জন ব্যক্তিগত সদস্য রয়েছেন এই নাগরিক সংগঠনের জোটে।

এনআই/এনএফ