গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে প্রদর্শিত হয়েছে মঞ্চনাটক ‘বুকের ভেতর বাবুই পাখি’। ‘আমার চোখে জুলাই বিপ্লব’ শিরোনামকে প্রতিপাদ্য করে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের আয়োজনে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় গত রোববার-সোমবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও থিয়েটার ইনস্টিটিউটের মঞ্চে নাটকটি প্রদর্শিত হয়।

নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। সহকারী নির্দেশনায় ছিলেন ফাহমিদা আকতার।

নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ে করেছেন- রাশেদুল ইসলাম, ফাহমিদা আকতার, আছাদ বিন রহমান, আল আমিন ইসলাম, আফিয়া ইবনাত ওয়াফা, নাঈম আহমেদ ইমন, আফরিন তিশা, রোহান আল মোহান, শাহরিয়ার প্রান্ত, সুজয়, তোয়া, সাব্বির, জাহাঙ্গীর, রাই, তারা, পূর্ণতা, রিমি, হামিদ, দ্বীপ, অনুভূ। নাটকের সঙ্গীত পরিকল্পনায় ছিল সেমন্তী, আলোক পরিকল্পনায় ছিল আসলাম ও সঞ্জিত। নাটকের সাথে যুক্ত সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নাট্যকলা বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।

নাটকটি সম্পর্কে ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, জুলাই এক দুঃসহ সময়, যা আমাদের একত্রিত করেছিলো। আবু সাঈদের প্রসারিত দু’হাত থেকে অজপাড়া গাঁয়ের হৃদয়-তরুয়ার শহীদি মৃত্যু আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমরা স্বৈরাচারের বিশাল পাথর আমাদের ঘাড় থেকে নামাতে পেরেছি। সেরকমই এক জীবন আমাদের নাটকের বৈশাখের। সে'ও এই একই ভোগবাদী সমাজের স্বপ্ন ও বাস্তবতার বিস্তর ফারাক নিয়ে বড় হয়ে উঠা একজন নতজানু নাগরিক। যেই জীবনের বেশিরভাগ জুড়েই আছে সয়ে যাওয়ার ইতিহাস, আছে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস। সেই জীবন বৈশাখ ও তার বাবা-মাকে হতাশ করে-তাদের স্বপ্ন থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে। তবুও বৈশাখ স্বপ্ন দেখতো এক বৈষম্যবিহীন সময়ের। সে অনুভব করতো- সেই সময় নির্মাণ এমনি এমনি হয় না, তার জন্য লড়াইটাও করতে হয়।

তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজন যখন উপস্থিত হয়, আমাদের বৈশাখ ঠিকই হাজির হয় রাজপথে। অনেক না পাওয়ার গ্লানি ও অসংখ্য আকাঙ্ক্ষার জমিনে দাঁড়িয়ে বৈশাখ অন্যদের মতোই স্বৈরাচারের গুলির সামনে স্লোগানের কণ্ঠে জোর লাগায়। যুদ্ধের চিরাচরিত নিয়ম সম্ভবত এই যে, কেউ পুড়ে যায় বলেই কেউ আলো পায়। আর সেই নিয়মেই সম্ভবত ভিড়ের ভেতর বৈশাখ হয়ত হারিয়ে যায় অথবা আমরাই হয়ত হারিয়ে ফেলি বৈশাখকে। আর আমরা যারা হারাই না, তারা হয়ত সময়ের পরিক্রমায় বৈশাখদের নিয়ে বিস্মৃত হই। তবুও কেউ কেউ থাকে, যারা বিস্মৃত হয় না। যারা স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে জীবন্ত রাখে বৈশাখদের। তেমনই এক স্মৃতি আঁকড়ে আছে আমাদের নাটকের আরেক চরিত্র নির্জন।

নির্দেশক আরও বলেন, এভাবে বৈশাখের অসহনীয় জীবন কীভাবে তাকে জুলাইয়ের রাজপথ পর্যন্ত নিয়ে যায়। সেই গল্পই বলেছে আমাদের নাটক।
এই নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে আমরা শুধু স্মৃতিকে স্মরণ বা বিজয়কে উদযাপন করতে চাইনি। আমরা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছি, সব হারিয়ে যাওয়া জীবনের প্রতি আমাদের দায় আছে। সেই দায়, আমরা পালন করার চেষ্টা করেছি।

দু’দিনে মোট ৩টি প্রদর্শনী মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকটির। জুলাই গণ অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নাটকটির প্রদর্শনী দর্শকদের মন ছুঁয়েছে বলে উপস্থিত দর্শকরা জানিয়েছেন।

টিআইসিতে গত ৪ আগস্ট নাটকটি দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন- চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ( সার্বিক) ও প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকতা চৌধুরী রওশন ইসলাম, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ দিদারুল আলম এবং সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সৈয়দ আয়াজ মাবুদ।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা শিল্পীদের এই সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধরে রাখার আহ্বান জানান। তরুণ প্রজন্মের মাঝে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আয়োজকরা।

উল্লেখ্য, নাটকটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে জেলা পরিষদ আয়োজিত আইডিয়া প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়েছিল।

এমআর/বিআরইউ/