ভোট গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেছেন, নারীর অধিকার প্রশ্নে ভোট বর্জন কোনো সমাধান নয়। নারীর প্রতিনিধিত্ব ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন নারীর জন্য অবমাননাকর। কমিশন ক্ষমতার বিলি বণ্টন ও রাজনৈতিক ইস্যুতে ব্যস্ত। সেখানে নারী ইস্যু অবহেলিত।

শনিবার (২৩ আগস্ট) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হলেই নারীর ক্ষমতায়ন সুরক্ষিত হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, ‘নারীকে বাদ দিয়ে নারীর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নয়’ এই নীতি আন্তর্জাতিক ভাবে অনুসৃত। অথচ দুঃখজনক হলো, কমিশনে তা অনুপস্থিত। গত ৩ আগস্ট ৬৭টি নারী সংগঠন ঐকমত্য কমিশনে নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক দলগুলোও আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। এমন অবস্থায় মনে হচ্ছে ঐকমত্য কমিশন ঘেরাও ছাড়া কোন উপায় নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ নারীর মনোনয়ন প্রস্তাব এখনো উপেক্ষিত। দলগুলো ৫ থেকে ৭ শতাংশ নারীকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে চায়, এটা দয়া-দাক্ষিণ্যের মতো। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে এখনো আস্থার সংকট রয়েছে। নারীকে শুধু রাষ্ট্রের কাছে অধিকার চাইলেই হবে না। পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই নারীর ক্ষমতায়নের দাবি উত্থাপন করতে হবে।

ছায়া সংসদে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতি মূলত দলীয় মনোনয়ন বা সিলেকশন নির্ভর। এখানে জনগণের ভোটের পরিবর্তে দলীয় নেতৃত্বের কৃপায় এমপি হতে হয়। ফলে ভোটাররা নারী প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই করতে পারে না। এজন্যই সংসদে সংরক্ষিত নারী এমপিদের অনেককে কেবল অলংকারস্বরূপ মনে হয়েছে, যা নারীর জন্য সম্মানজনক নয়। দুই একজন ছাড়া বেশিরভাগ এমপি সংসদে হ্যাঁ-না ভোট ও হাততালির বাইরে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেননি। এমনকি কেউ কেউ স্ক্রিপ্ট দেখে বক্তব্য দেওয়ার সময়ও আত্মবিশ্বাসহীনভাবে কাঁপতে দেখা গেছে। এতে সংরক্ষিত আসনের পদগুলো মর্যাদা পায়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে সংসদকে সার্কাসে পরিণত করেছে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদে নারীর সরাসরি নির্বাচন ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দাবি করলেও রাজনৈতিক দলগুলো তাতে একমত হয়নি। দুঃখজনক হলেও কমিশনে কোনো নারী সদস্য নেই এবং সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০টির বেশি দলের মধ্যেও বড় দলগুলোর পক্ষ থেকে নারী প্রতিনিধি চোখে পড়েনি।

হাসান আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সংসদে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। নারী সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে দলগুলোর ওপর চাপ তৈরি করছে না বলেই মনে হচ্ছে। তাই নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে ও সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে নারী নেত্রীদের উচিত বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে নামা।

ছায়া সংসদে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের পরাজিত করে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। 

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, মাইদুর রহমান রুবেল, নিশাত সুলতানা, সাংবাদিক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

এমএইচএন/বিআরইউ