রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকার ৩০০ ফিট রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে তাকে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মরদেহটি সুমি হাসান নামে এক নারীর। গত বছর ১৯ জুন রাতে হত্যার শিকার হন সুমি। তার মোবাইল ফোনে থাকা তিনটি নম্বরের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে তিন খুনিকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সিআইডি’র জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পরস্পর যোগসাজশে সুমি হাসানকে শ্বাসরোধে হত্যা ও মরদেহ গুমের চেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেফতার হওয়া তিন জন হলেন- ফারুকুল ইসলাম (৪৩), কাজী ইমরান মাহমুদ (৩২) ও সালাউদ্দিন খলিফা ওরফে সুমন।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির ঢাকা মেট্রো অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, গত বছরের ১৯ জুন ঢাকার খিলক্ষেত থানার পূর্বাচল এলাকায় ৩০০ ফিট রাস্তার দক্ষিণ পাশের ঝোঁপের ভেতরে অজ্ঞাত নারীর লাশ দেখতে পেয়ে খিলক্ষেত থানা পুলিশ সিআইডি ক্রাইমসিন টিমকে খবর দেয়।

সিআইডি ক্রাইমসিন এবং ঢাকা মেট্রো উত্তর সিআইডির দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করে। তারা লাশের ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স সংগ্রহ করে। ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা যায় ওই অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয়। তার নাম সুমি হাসান (৩০)। বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার ছিকটিবাড়ীতে। নিহত সুমি হাসানের স্বামীর নাম জাহিদ হাসান। পেশায় তিনি একজন ড্রাইভার এবং তিনি বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। জাহিদ হাসানের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা যায়, ঘটনার সময় তার অবস্থান ছিল জিগাতলা।

জিগাতলা থেকে জাহিদ হাসানকে খুঁজে বের করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি সুমি হাসানের প্রাক্তন স্বামী। তিনি সুমি হাসানের পালক পিতা-মাতার ঠিকানা জানেন। পরে তাকে নিয়ে তার পালক মাতা আম্বিয়া খাতুনের বাড়িতে গিয়ে সুমি হাসানের ছবি দেখালে তিনি সুমি হাসানকে শনাক্ত করেন। এরপর সুমি হত্যার ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা হয়।

পালক মাতা আম্বিয়া খাতুনের নিকট থেকে সুমি হাসানের মোবাইল নম্বর নিয়ে তা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুমি জীবিত অবস্থায় সর্বশেষ অর্থাৎ গত বছরের ১৮ জুন ৩টি নম্বরে কথা বলেন। সেসব নম্বরের লোকেশন খিলগাঁওয়ের নাগদারপাড়া ও শেখের জায়গা। নম্বর ৩টির রেজিস্ট্রেশন পর্যালোচনা করে গ্রাহকের নাম ফারুকুল ইসলাম (৪৩), কাজী ইমরান মাহমুদ (৩২) ও সালাউদ্দিন খলিফা ওরফে সুমন (৩৮) বলে তথ্য মেলে। ফোনকলের তথ্য সূত্র ধরে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া তিন জন সুমি হাসানের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন।

শেখ ওমর ফারুক বলেন, গ্রেফতার হওয়া তিন জন জানান- সুমি হাসান শারীরিক সম্পর্কের জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিন জনই ৩০ হাজার টাকা নাই বলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। টাকা না দিলে ভিকটিম সুমি আসামি ফারুকের স্ত্রীকে সব বলে দেবেন বলে হুমকি দেন। এরপরই সুমিকে খুনের পরিকল্পনা করেন তারা।

তারা পরস্পর যোগসাজশে সুমি হাসানকে গত ১৮ জুন রাতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর মরদেহ গুম করতে পরদিন সকালে অপরিচিত সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে পূর্বাচল থেকে ঢাকাগামী ৩০০ ফুট রাস্তার পাশের ঝোঁপে ফেলে যান।

তদন্তকালে পাওয়া সাক্ষ্য-প্রমাণ, সুরতহাল প্রতিবেদন, আসামিদের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, আইটি ফরেনসিক রিপোর্ট, ডিএনএ প্রোফাইল রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় গ্রেফতার হওয়া ফারুকুল ইসলাম, কাজী ইমরান মাহমুদ ও সালাউদ্দিন খলিফা অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক, শ্বাসরোধ করে হত্যা ও মরদেহ গুমের চেষ্টা করেন। মামলাটির তদন্ত সমাপ্ত করে তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে বলে জানান শেখ ওমর ফারুক।

জেইউ/এইচকে/জেএস