জামায়াত-হেফাজত, দুর্নীতি ও করোনা এ তিন ভাইরাস পুষে রেখে জীবন জীবিকা বাঁচবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসনুল হক ইনু।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাসানুল হক ইনু বলেন, জামায়াত-হেফাজত তেঁতুল হুজুররা আসলে কোনো আলেম নয়। পুরনো স্বভাব না বদলে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি। তারা এখনো জঙ্গি-সন্ত্রাসী তেঁতুল হুজুরদের রক্ষা করার জন্য বক্তব্য বিবৃতি দিয়েই চলছে। এই তিন ভাইরাস পুষে রেখে জীবনও বাঁচবে না, জীবিকাও বাঁচবে না। তাদের কোনো ছাড় না দিয়ে ধ্বংস করতে হবে। জঙ্গি-দুর্নীতি-করোনা এ তিন ভাইরাসকে ধ্বংস করে সুশাসন ও সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসহ অন্য খাতগুলোর কেনাকাটায় কী ঘটেছে তা সবাই জানে। স্বাস্থ্যখাতে সুশাসনের কোনো বালাই নেই। এ খাতে কেবল দুর্নীতির খবর। তাদের বরাদ্দ অপ্রতুল। প্রাপ্ত বরাদ্দও খরচ করতে পারে না। যেটুকু খরচ করেছে তাতে দুর্নীতির বদনাম কামিয়েছে। এ কারণে দেশে যথাসময়ে অক্সিজেন প্লান্ট হয়নি। করোনা সামগ্রী কেনা হয়। ব্যবস্থাপনা ঠিকমত হয়নি। এগুলো চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা বাজেটে থাকা উচিত ছিল।

ইনু বলেন, সম্প্রতি দুর্নীতির একটি ভয়ংকর খবর জানা গেছে । ১৭৫৫ কোটি টাকা দিয়ে রাডার কেনার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই রাডার কেনা হয়েছে মাত্র ৬৩০ কোটি টাকায়। কারা এই টাকা লুটপাট করে খাওয়ার আয়োজন করেছিল? হাতের পর হাত, ঘাটের পার ঘাট ঘুরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার পর চুরির ঘটনা ধরা পড়ল। বাজেটে বরাদ্দ তাই যথেষ্ট নয়। বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়, প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন সবক্ষেত্রেই দুর্নীতিবাজ-লুটেরা সিন্ডিকেটের আধিপত্য বিদ্যমান।

তিনি বলেন, সরকারের সামগ্রিক কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। কালোটাকা বাজেয়াপ্ত করে অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। তারেক-কোকোর পাচারকৃত অর্থের মতো বেগমপল্লীর সেকেন্ড হোমের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হবে। যে চোরেরা সরকারকে কালিমালিপ্ত করছে তাদের বিদায় করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের কারাগারে পাঠাতে হবে।

জাসদ সভাপতি বলেন, এখন জাতির এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত টিকা সংগ্রহ। টিকা নিয়ে সমন্বয়হীনতা ও তুঘলকি কাণ্ড বন্ধ করতে হবে। দেশে টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক বছরের মধ্যে সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাসকে পরাজিত করতে হবে। করোনাভাইরাসকে পরাজিত করতে না পারলে সব অর্থহীন হয়ে যাবে।

ইনু বলেন, প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়ছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ সুফল পাচ্ছে। উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতিও বাড়ছে। অনেকে দুর্নীতিকে উন্নয়নের অনুষঙ্গ মনে করলেও আমি তা মনে করি না। আমি বিশ্বাস করি দুর্নীতিমুক্ত উন্নয়ন সম্ভব। এতে উন্নয়নের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। বাজেট বাস্তবায়নেও সুশাসন দরকার।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খাতে মৌলিক অধিকার হিসেবে গ্রহণ করে এসব খাতে কাঠামোগত পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল। আমরা চাইলে সেটা এবারই পারতাম।

ইনু বলেন, অর্থমন্ত্রীর খাত অগ্রাধিকার নির্ণয় সঠিক কিন্তু বরাদ্দ বেঠিক। এ বাজেট অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের নীতির নয়। এটি এক বছর পেটে-ভাতে চলার বাজেট। বাজেটে প্রবৃদ্ধি হবে কিন্তু পুষ্টি-সম্মত অর্থনীতির সূচনা হবে না।

ছকের বাইরে এবার যাওয়ার সুযোগ ছিল উল্লেখ করে জাসদের সভাপতি বলেন, দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞতায় এবার বাজেটে ছকের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল। সুযোগ ছিল করোনা মোকাবিলার যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কৌশলগত সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা সুস্পষ্ট করার। কিন্তু তা করা হয়নি।

এইউএ/এসকেডি