নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে মোট প্রায় ১৮৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ (এস আলম) ৪০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলা দুটি করা হয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রথম মামলায় এস আলমসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মিফতাহ উদ্দীন, মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, আকিজ উদ্দীন, শব মেহার স্পিনিং মিলস লিমিটেডের এমডি মো. মশিউর রহমান, পরিচালক মোহাম্মদ শওকত উসমান, টপ টেন ট্রেডিং হাউজের মালিক মো. আলমাস আলী, গোল্ড স্টার ট্রেডিংয়ের মালিক বেদারুল ইসলাম ও আলম ট্রেডিং অ্যান্ড বিজনেস হাউজের মালিক নূরুল আলম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় আলম ট্রেডিং অ্যান্ড বিজনেস হাউজ, শব মেহার স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও গোল্ড স্টার ট্রেডিং হাউজ নামীয় নামসর্বস্ব কোম্পানির হিসাব থেকে বিভিন্ন সময়ে ৫৪৪ কোটি টাকা টপ টেন ট্রেডিং হাউজের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট ডেবিট ভাউচারের মাধ্যমে টপ টেন ট্রেডিং হাউজের হিসাব থেকে ৫২১ দশমিক ৫২ কোটি টাকা এস. আলম গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান এস. আলম সুপার এডিবল অয়েল লি., সোনালী ট্রেডার্স, এস. আলম ভেজিটেবল অয়েল লি., এস. আলম রিফাইন্ড সুগার ও এস. আলম সুপার এডিবল অয়েলের নামে খাতুনগঞ্জ শাখায় রক্ষিত চলতি হিসাবে জমা করা হয়।

দ্বিতীয় মামলায় এস আলমসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন- এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান ও ফারজানা পারভীন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক ডিএমডি মিফতাহ উদ্দীন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাব্বির, মো. মাহবুব উল আলম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী, সাবেক এসভিপি মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম, মো. মনজুর হাসান ও তাহের আহমেদ চৌধুরী, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আইটি প্রধান মোহাম্মদ সিরাজুল কবির ও আইআইএস কনসালটিং বিডির এমডি মো. ওয়াহিদুর রহমান।

নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের মধ্যে রয়েছেন- আদিল কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাহ আদিল, এস আলম কোল্ড রুলড স্টিলসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আব্দুস সামাদ, এস আলম কোল্ড বুলড স্টিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গনি, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক রাশেদুল আলম, ইনফিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজের হিসাব পরিচালনাকারী আশরাফুল আলম, মেসার্স জেনেসিস এন্টারপ্রাইজের মালিক আহসানুল আলম, মেসার্স মায়মুনা ট্রেডিংয়ের মালিক মায়মুনা খানম, চেমন ইস্পাতের চেয়ারম্যান শারমিন ফাতেমা, ডিগনিটি বিজনেস হাউজের মালিক মো. সাইফুদ্দীন, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, মেসার্স মিনহাজ কর্পোরেশনের মালিক এমদাদুল ইসলাম (মিনহাজ), জিনিয়াস ট্রেডিংয়ের মোহাম্মদ আবুল কালাম, ক্রাফট বিসনেস অ্যান্ড ট্রেডিং হাউজের মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী, এপারচার ট্রেডিং হাউজের এস এম নেছার উল্লাহ, মেসার্স দুলারী এন্টারপ্রাইজের মো. ছাদেকুর রহমান, ইউনিক ট্রেডার্স অ্যান্ড বিজনেস হাউজের মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, মেসার্স আনসার এন্টারপ্রাইজের আনছারুল আলম চৌধুরী ও গ্রিন এক্সপোস ট্রেডার্সের মালিক এম এ মোনায়েম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিনিয়োগ প্রস্তাব (ঋণ প্রস্তাব) শাখা থেকে প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ ও ঋণ অনুমোদন, একই প্রক্রিয়ায় যথাযথ যাচাই ছাড়া ও ঋণ যোগ্যতা নিরূপণ না করে ঋণসীমা বৃদ্ধি এবং ঋণের নামে গৃহীত ১০৭৭ দশমিক ১১ কোটি (সুদাসলে ১২৮১ দশমিক ৪৫ কোটি) টাকা এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দুটি করা হয়েছে।

আরএম/এমজে