এক বছর পর জুলাই-আগস্টের ঘটনায় মামলা : আসামি মৃত ব্যক্তিও
চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর গুলিবিদ্ধ এক ছাত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮২ জনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা নাম রয়েছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আসামিদের তালিকায় একজন মৃত ব্যক্তির নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি চার বছর আগে মারা গেছেন। এ ছাড়া মামলায় কোতোয়ালি থানায় দায়িত্বরত ওসি হিসেবে ফজলুল কাদেরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ওই সময় কোতোয়ালি থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন ওবায়দুল হক নামে এক পুলিশ পরিদর্শক।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে এ মামলার আবেদন করেন চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্সেস অব হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র এ কে এম নুরুল্লাহ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাসনিম আক্তার নিশাত বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ একজন ছাত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ১৮২ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো শাখাকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের চট্টগ্রামে এনে ৩৬ দিনব্যাপী পুলিশ ও ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এ ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে, শনাক্তকরণ সহজ না করতে তারা মোবাইল সিম নিজ এলাকায় রেখে চট্টগ্রামে এসেছিল। চিকিৎসা গ্রহণ ও নিরীহ, নিরপরাধ লোক যেন অন্তর্ভুক্ত না হয় এ কারণে মামলা করতে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়েছে। প্রত্যেক আসামির নাম তিনি বিশ্বস্ত সূত্র ও নিজস্ব যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
বাদী নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় যোদ্ধা উল্লেখ করে আদালতে বলেছেন, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নিউমার্কেটে অন্য ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলন চলাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ অঙ্গ-সহযোগী সন্ত্রাসীরা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। এতে তিনিসহ ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হন। বাদীকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার দুই পায়ে এখনো বুলেট বিদ্ধ রয়েছে।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান, সাবেক সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারাও আসামির তালিকায় আছেন। ২৪ জন সাবেক নারী কাউন্সিলরকেও আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর নাম ১৫০ নম্বর আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যদিও তিনি ২০২১ সালে মারা গেছেন।
এ ছাড়া মামলায় শিল্পপতি ও কেএসআরএম গ্রুপের মালিক রাহাত এবং সাতকানিয়ার শিল্পপতি আবুল বশর আবু ও মোসলেম উদ্দিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদী এ কে এম নুরুল্লাহ বলেন, গত ৮ আগস্ট কোতোয়ালী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করায় আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। ঘটনার চার মাস পরে সুস্থ হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। মামলায় যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের অপরাধ-প্রমাণ সম্পর্কে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করেছি। ভুলে হয়ত মৃত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এমআর/এসএসএইচ