নারী আন্দোলনের দাবিগুলো রাজনৈতিক ইশতেহারে থাকতে হবে, রাজনীতির পরিবেশ নারীবান্ধব হতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন আলোচকরা।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সংসদে নারীর কার্যকর ও ফলপ্রসূ প্রতিনিধিত্ব : সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন’ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা সভা বক্তারা এ কথা বলেন।

তারা বলেন, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আসন সংখ্যা বাড়ানো এবং সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে সবাই একমত, কাজেই আমাদের এক সঙ্গে আওয়াজ তুলতে হবে, নারীদের ৩৩% মনোয়ন ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে নারী সংগঠনগুলোকে আওয়াজ তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তার অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা। জাতীয় সংসদে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্যের উপস্থিতি নারীসমাজের স্বার্থ ও মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখবে এবং জনগণের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা তৈরি করতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সাবেক সংসদ সদস্য ড. নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, ২০২৫ সালে এসেও নারীকে ভাবতে হয় সে মনোনয়ন পাবে কিনা, যা খুবই দুঃখজনক। আরপিও অনুসারে নারীর ৩৩% প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জায়গায় রাজনৈতিক দল থেকে বাস্তবায়নের পরিবর্তে কেবল সময় ক্ষেপণ করা হয়েছে। নারী তার মর্যাদা চায়।

ঐক্যন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. এস এম এ সবুর বলেন, নারীর অধিকার নাই সম্পদে, নাই দেশ শাসনে। রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। আগামীতে সব রাজনৈতিক দলকে নারীর জন্য আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানাই।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানে মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে নারীর সমতার কথা বলা হলেও সেটি এখনো নানামুখী কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। আজকের সুপারিশকৃত দাবিগুলো বাস্তবায়নে অনেক দল একমত হবে না, এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর সংগ্রহ করে মেমোরেন্ডাম করে জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির দাবিগুলো নিয়ে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। নারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সচেতন করতে হবে; অনেক নারী ভোটার হতে চায় না, বিশেষ করে গার্মেন্টসে যে সব নারী কাজ করেন। এই বিষয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন,  নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় মনস্তাত্তিকভাবে প্রধান সংকট পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা ভাবনা। নারীরা পুরুষের সমান নয়- এই ভাবনা সমাজ এখনো বহন করে চলেছে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার ৫১% নারী। নারীর পদায়ন আর ক্ষমতায়ন এক নয়, সংরক্ষিত নারী আসনের দায়িত্ব কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করতে হবে- নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন করতে। এই মুহূর্তে নারী প্রার্থী একজন পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। ফলে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকা উচিত এবং এই আসনে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচন থাকা উচিত।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, রাজনীতি, অর্থনীতিতে ও সামাজিকভাবে নারীর অংশগ্রহণ প্রান্তিক। সংবিধানে সিডও সনদে নারীর সমতার কথা বলা হচ্ছে, এটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। সাধারণ আসনের নির্বাচনে নারীর প্রার্থীতা থাকবে তার বাইরে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন থাকবে। নারীর জন্য কনষ্টিটিয়েন্সি বিল্ডআপ করতে হবে।

এএসএস/বিআরইউ