জলবায়ু ঝুঁকির বিরুদ্ধে তরুণ উদ্যোক্তাই ‘নতুন শক্তি’
জলবায়ু পরিবর্তন কোনো দূরের হুমকি নয়, বরং বর্তমানের কঠিন বাস্তবতা। একই সঙ্গে দেশে তরুণদের বেকারত্বের হারও উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দুই সংকট একসঙ্গে মোকাবিলা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো তরুণদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। কারণ, তারা শুধু নিজেদের জীবিকা সুরক্ষিত করবে না, বরং কর্মসংস্থান তৈরি করে সমাজ ও দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারবে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘প্রজেক্ট রিফ্লেকশনস অ্যান্ড ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ ফেয়ার’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। ব্র্যাক ও টিকটক যৌথভাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি ছিল ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট এন্টারপ্রেনারশিপ প্রোগ্রাম ফর ইয়ুথ-লেড বিজনেসেস’ প্রকল্পের সমাপনী আয়োজন।
বিজ্ঞাপন
এক বছরের এই পাইলট উদ্যোগে রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের ১ হাজার ৩৫০ জন তরুণ উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ ও নানা ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়। তাদের তৈরি পণ্য ও সেবার প্রদর্শনী মেলাতেও অংশ নেন উদ্যোক্তারা। পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প, পোশাক, মাটির সামগ্রীসহ ১১টি স্টলে তরুণ উদ্যোক্তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সংখ্যা ৫১ শতাংশ বেড়েছে। তরুণ উদ্যোক্তারা শুধু নিজেদের স্বপ্নপূরণ করছে না, তারা কর্মসংস্থান তৈরি করছে এবং তাদের কমিউনিটিকে অনুপ্রাণিত করছে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষ অতিথি ইউনিলিভারের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস ও কমিউনিকেশনের পরিচালক শামীমা আক্তার বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ তরুণদের নিজেদের সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে সঠিক বিনিয়োগের দিকনির্দেশনা পেয়ে তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি আরও যোগ করেন, বৈচিত্র্যময় ও টেকসই ব্যবসায়িক উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার অপরিহার্য।
ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার অসাধারণ সম্ভাবনা এরইমধ্যে প্রমাণিত। অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় আরও বেশি তরুণ উদ্যোক্তার দরকার।
এ সময় বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মো. বেলায়েত হোসেন, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান কাজী রওশন আরা, হেড অব অপারেশনস মো. আল ইমরান এবং মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের প্রধান সাজিদুর রহমান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারীসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন প্যানেল আলোচনায়। নাদিরা খাতুন, মোসাম্মত উম্মে সালমা, শাম্মি আখতার ও মিনু বেগম তাদের উদ্যোগের চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার তরুণ শ্রমশক্তির মধ্যে ৭ দশমিক ২ শতাংশ বা প্রায় ১৯ লাখ ৪০ হাজার তরুণ বর্তমানে বেকার। এ বাস্তবতায় বক্তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বেকারত্ব—দুই সংকটের কার্যকর মোকাবিলায় তরুণ উদ্যোক্তারাই হতে পারে দেশের ‘নতুন শক্তি’।
টিআই/জেডএস