দুদকের মামলা
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, আসামি ৩১ জন
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নামে চুক্তি ভঙ্গ ও অনিয়মের মাধ্যমে পাঁচগুণ অর্থ বা ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩টি ওভারসিজ কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ১৩টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, আসামিরা বায়রার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে সিন্ডিকেট করে রেজিস্ট্রেশনের শর্ত ভঙ্গ করেন। সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে ৫ গুণ বেশি অর্থ নিয়ে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো হয়। তারা অবৈধভাবে সংগৃহীত অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর ও পাচার করেছেন। এতে কর্মীরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(বি), ১৬১, ১৬২, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ৪২০ ও ৪০৯ ধারায় এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
বিজ্ঞাপন
মামলাগুলোর আসামিদের বিষয়ে জানা যায়, আকাশ ভ্রমণ নামে ওভারসিজ কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে অতিরিক্ত ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আদায় করে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মনসুর আহমেদ কালামকে আসামি করা হয়েছে।
৫৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উননার ওভারসিজের মালিক রহিমা হক ও মাহফুজুল হক, ১২৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শাহীন ট্রাভেলসের মালিক এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম আসামি হয়েছেন। ৮১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতে নাভিরা লিমিটেডের মালিক শেখ মোহাম্মদ শাহিদুর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও শামিম হাসানকে, ১৩২ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতে আদিব এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক কে এম মোবারক উল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ, নওশাদ আরা আক্তার ও হাছনা আক্তার আজাদকে আসামি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, ৫৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতে ইউনাইটেড ম্যানপাওয়ার কনসালটেন্সের নাজমা আক্তার, জেড ইউ সায়েদ, জুহানা সুবাইতা ও জিসান সায়েদ, প্রায় ৮০ কোটি টাকা আত্মসাতের গ্রীনল্যান্ড ওভারসিজের রেহানা আরজুমান হাই এবং ৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা আত্মসাতে পি আর ওভারসিজের ইমান আকতার পুনম ও গোলাম রাকিব আসামি হয়েছেন।
এ ছাড়া ১১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে জাহারত অ্যাসোসিয়েটের মালিক মুহাম্মদ শফিকুল আলম ফিরোজ, নাহিদা আক্তার ও রওশন আরা পারভীন, ৫৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা আত্মসাতে অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সির মহিউদ্দিন আহমেদ ৬৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মেসার্স জান্নাত ওভারসিজের লিমা বেগম আসামির তালিকায় এসেছেন।
আর ৬২ কোটি ২৯ লাখ টাকা আত্মাতের অভিযোগে মিডওয়ে ওভারসিজের মোহাম্মদ রফিকুল হালদার ভূইয়া ও কাজী অদিতি রুবাইয়াতকে এবং ১১২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতে সাউথ পয়েন্ট ওভারসিজের মঞ্জুর কাদের, সাদিয়া মঞ্জুর, আহমেদ আতাউর রহমান, আহমেদ খালেদ লুবনানী ও আহমেদ ফয়সাল রমাদানীকে আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১২ মার্চ মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে ১১২৮ কোটি ৬১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
সেখানে ওভারসিজ কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১২ পৃথক মামলা দায়ের করা হয়, যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। আজকের মামলা মিলে মোট ২৫টি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে আসামি ৬৪ জন ও মোট আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ২৮৮ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।
আরএম/জেডএস