তামাক চাষ বাড়লে বিলুপ্ত হবে ইলিশ, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, হালদার পাড়ে তামাক চাষের ফলে ব্যাপক দূষণের কারণে ২০১৬ সালে নদীতে ইলিশের ডিম উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

হালদার পাড়ে তামাক চাষ নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না। তামাক কোম্পানিগুলোর ‘আগ্রাসী’ কার্যক্রম ও সরকারের কিছু উচ্চপদস্থ ‘অসাধু’ কর্মকর্তারাই এর জন্য দায়ী বলে তারা মনে করছেন।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, উবিনীগ, তাবিনাজ ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া) চুড়ান্ত করা জরুরি’- শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় বিশেষজ্ঞ আলোচকরা এসব কথা বলেন।

ভার্চুয়াল সভায় বিশেষজ্ঞ আলোচকরা

 

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা অববাহিকার মনিকছড়ি এলাকায় শতশত একর জমিতে তামাক চাষের কারণে নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

তিনি বলেন, তামাক চাষে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি তামাক গাছের উচ্ছিষ্টাংশ বৃষ্টির পানির ঢলের মাধ্যমে নদীতে পড়ছে। যা দূষণ সৃষ্টির মাধ্যমে মৎস্যসম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ওই এলাকাকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হলেও এর অববাহিকায় তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা হয়নি, যা সরকারের নীতিগত বৈপরীত্য্যকেই তুলে ধরে।

উন্নয়ন পরামর্শক নাসির উদ্দীন শেখ বলেন, ফসলের উর্বরতা ও পরাগায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কীটপতঙ্গ তামাক চাষের জমিতে বসে না। ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, যা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য সংকটের দিকে ধাবিত করছে। গো-খাদ্য এবং গবাদিপশুর জন্যও তামাক ক্ষতিকর। ফলে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরিবেশকে তামাকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা জরুরি।

ইপসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় কৃষকদের তামাক চাষে প্রলুব্ধ করছে কোম্পানিগুলো। এমনকি নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, তামাকের বিকল্প চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে কারিগরি সহায়তা, উন্নত ও দ্রুত বর্ধনশীল বীজ সার দেওয়ার পাশাপাশি স্বল্প শর্তে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক মাহবুবুল আলম বলেন, বিগত দিনে কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে কমিয়ে আনতে বলা হলেও নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা আদালত ও সংবিধানের নির্দেশনা মানছেন না।

উবিনীগের পরিচালক সীমা দাস সীমু বলেন, তামাক চাষের ফলে রবি মৌসুমে ফসলের উৎপাদন কমছে, যা জাতীয় খাদ্য ঘাটতির দিকে ধাবিত করছে। তামাক চাষের জন্য কৃষকদের চড়া সুদে সার, বীজ সরবরাহ করা হয় এবং কোম্পানির পক্ষ থেকেই প্রতিবছর পাতার গ্রেড নির্ধারণের সুযোগে চাষিদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কম মূল্য দেওয়া হয়। 

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। অথচ রপ্তানি শুল্ক ছাড় দেওয়ার কারণে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বেড়ে গেছে।

এএসএস/বিআরইউ