সাইফুজ্জামানের শতকোটি টাকা পাচার, স্বীকার করে ২ কর্মকর্তার জবানবন্দি
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের দুই সহযোগী এবং আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা উৎপল পাল ও মো. আবদুল আজিজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালত এই দুই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এতে আসামিরা সাবেক এই মন্ত্রীর অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এবং তাদের মাধ্যমে এ পর্যন্ত জাবেদের শত শত কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
বিজ্ঞাপন
দুদকের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইউসিবিএল থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনায় দুদকের মামলায় রিমান্ডে থাকা উৎপল পাল ও মো. আবদুল আজিজ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর আবদুল আজিজ ও উৎপল পালকে নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি টিম। এরপর তাদের আদালতের নির্দেশে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডে থাকাকালে ২১ সেপ্টেম্বর ভোরে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর গাড়িচালকের বাড়ির পাশ থেকে ২৩ বস্তা নথিপত্র জব্দ করে দুদক।
বিজ্ঞাপন
২৪ জুলাই দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদসহ ৩১ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছিলেন। মামলায় জাবেদ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন– জাবেদের স্ত্রী ও ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান (৪৬), ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী (৪৬), জাবেদের বোন রোকসানা জামান চৌধুরী (৫৬) এবং ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ (৫৫)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে খুলে দেওয়া হয় পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান– ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং। এরপর ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকার টাইম লোন অনুমোদন করানো হয়। ব্যাংকের নিজস্ব ক্রেডিট কমিটির ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ উপেক্ষা করে ২০২০ সালের ৮ মার্চ পরিচালনা পর্ষদ ওই ঋণ অনুমোদন দেয়। পরে সেই টাকা ভাগ করে একই ব্যাংকে খোলা চারটি হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করে পাচার করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ব্যাংক পরিচালক, ঋণ আবেদনকারী এবং অনুমোদনকারী সবাই একে অপরের আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সমন্বিত চক্রান্তের মাধ্যমেই এ লোন নেওয়া ও টাকা পাচার সম্ভব হয়।
ইউসিবিএল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ওই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল। নেতিবাচক প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণের টাকাগুলো ‘নাম সর্বস্ব’ চারটি প্রতিষ্ঠানের (আলফা ট্রেডার্স, ক্লাসিক ট্রেডার্স, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং) নামে ব্যাংক হিসাবে পে অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। পরে তা নগদে উত্তোলন করা হয়।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, এসব টাকা নগদ উত্তোলনের পর উত্তোলনকারী আরামিট গ্রুপের কর্মচারীরা পে অর্ডার, ভাউচারের মাধ্যমে ইউসিবিএল ব্যাংকের বহদ্দারহাট শাখায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে প্রদান করেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন।
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
এমআর/বিআরইউ