কবরস্থান-মসজিদ রক্ষার দাবিতে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ
চট্টগ্রামের হালিশহর সিজিপিওয়াই এলাকায় রেলের জমিতে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, যে জমি লিজ দেওয়া হয়েছে সেখানে রয়েছে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কবরস্থান, মসজিদ ও শতবর্ষী মাজার।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এসব স্থাপনা সংরক্ষণের দাবিতে বন্দর হালিশহর রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়ে বন্দর হাসপাতালের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, কবরস্থান-মসজিদ সংরক্ষণে দ্রুত লিখিত নির্দেশনা না এলে সিজিপিওয়াইসহ রেলের সব কার্যালয়ে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সিজিপিওয়াই রেলওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের কেন্দ্র। এখানে ট্রাফিক, যান্ত্রিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, নিরাপত্তা, হাসপাতাল, স্কুল ও ট্রেনিং একাডেমিসহ বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শত শত পরিবারও দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসতি গড়ে তুলেছে।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিজিপিওয়াইয়ের প্রধান ইয়ার্ড মাস্টার মো. আব্দুল মালেক, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সিজিপিওয়াই শাখার সভাপতি মো. হোসেন সহীদ ও সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি মো. আজিম উদ্দিন, রেলশ্রমিক দলের সভাপতি মো. ছাবের হোসেন, এমপ্লয়িজ লীগের কার্যকরী সভাপতি মো. মুহিদ উল্লাহ এবং রেলশ্রমিক দলের উপদেষ্টা মো. শামসুল আলম।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৫ সালে এক রেল কর্মচারীর মৃত্যু হলে তাকে চট্টগ্রাম বন্দর কবরস্থানে দাফন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে হালিশহরের এই জায়গাতেই দাফন শুরু হয়। তখনকার পরিত্যক্ত জলাভূমি ও জঙ্গল ধীরে ধীরে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কবরস্থানে রূপ নেয়। এর পাশেই রয়েছে শতবর্ষ পুরোনো মাজার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি রেলের কনটেইনার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) হালিশহরের ২১ দশমিক ২৯ একর জমি হস্তান্তর করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্সের কাছে। আইসিডি নির্মাণের জন্য দেওয়া এ জমিতে আগে থেকেই ছিল রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কবরস্থান, একটি মসজিদ, শতবর্ষী মাজার ও তিনটি জলাশয়।
‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সিজিপিওয়াই কবরস্থান’ নামে পরিচিত প্রায় ৩২ বছরের পুরোনো কবরস্থানের আয়তন শূন্য দশমিক ৬২৫০ একর। যেখানে ৪৫০টির বেশি কবর আছে। মসজিদের আয়তন প্রায় শূন্য দশমিক ৩৪ একর। এছাড়া শতবর্ষ পুরোনো হযরত কুতুব বিল্লাহ শাহর মাজারও রয়েছে ওই জমির ভেতরে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সাইফ লজিস্টিকসের অব ডক লাইসেন্স বাতিল করে। এরপরও জমি লিজ এবং নির্মাণকাজ ঘিরে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দানা বাঁধে।
জমি লিজের পরপরই ক্ষোভ দেখা দিলে রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, কবরস্থান ও মসজিদে কোনো স্থাপনা হবে না; বরং এগুলো সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। গত ২১ আগস্ট রেল সচিব জমি পরিদর্শন করে কবরস্থান ও মসজিদ সংরক্ষণের মৌখিক আশ্বাস দেন।
এমআর/এসএম