১৫ মাস ধরে বেতনহীন ৬৩৪ সিএইচসিপি, প্রধান কার্যালয় অবরোধ
কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ৬৩৪ জন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) টানা ১৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতন পরিশোধ ও পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে তারা রাজধানীর মহাখালীতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের (সিসিএইচএসটি) প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। বেতন না পাওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন।
বিজ্ঞাপন
গোপালগঞ্জ থেকে আসা কর্মী শাকির উদ্দিন জানান, তারা ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে ক্লিনিকে কাজ করছেন। প্রায় এক বছর বেতন-ভাতা পেলেও ২০২৪ সালের জুলাই থেকে বেতন পাচ্ছেন না।
তার ভাষায়, আমরা ১৫ মাস ধরে বেতন ছাড়াই সেবা দিয়ে যাচ্ছি। হেড অফিস মন্ত্রণালয়ের দিকে দোষ দেয়, আবার মন্ত্রণালয় হেড অফিসের দিকে ঠেলে দেয়। এর মাঝে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।
বিজ্ঞাপন
তাদের অভিযোগ, গত ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিনিয়র সিএইচসিপিদের (সংখ্যা প্রায় ১৩শ’) রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হলেও ২০২৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ৬৩৪ জনকে রহস্যজনকভাবে বাদ দেওয়া হয়। যোগদানপত্র জমা দিতে বলা হলেও তাদের কাগজপত্র গৃহীত হয়নি।
অনুমোদন আছে, বেতন নেই
আন্দোলনকারীরা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ হাজার ৯২৩টি পদ অনুমোদন ও সৃজন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও রয়েছে। অথচ বাস্তবে বেতন পাচ্ছেন ১৩ হাজার ২৮৯ জন। এই বৈষম্যের ফলে বাদ পড়েছেন তারা।
মো. রাসেল শিকদার নামের আরেক আন্দোলনকারী বলেন, আমরা কাজ করছি, অনুমোদনও আছে, বাজেটও আছে। তারপরও ১৫ মাস ধরে এক টাকাও পাইনি। যতদিন না বেতন মিলবে, ততদিন আমরা কার্যালয় ছাড়ব না।
অনিশ্চয়তায় ৬৩৪ পরিবার
১৫ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মীরা। কেউ কেউ পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে ধারদেনায় ডুবে গেছেন। তবুও ক্লিনিকের দরজা বন্ধ করেননি তারা। কিন্তু বারবার আশ্বাসেও সমাধান না হওয়ায় এবার কঠিন আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে আসা সিএইচসিপি ইয়াসমিন আরা জানান, আর্থিক সংকটের কারণে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে সবার অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই বিভিন্ন জেলা থেকে নামমাত্র কিছু কর্মী এসেছেন। তবে দাবি না মানলে ভবিষ্যতে প্রায় ৬৫০ জন একসঙ্গে মহাখালীতে জড়ো হয়ে ট্রাস্টের কার্যক্রম স্থবির করব।
নিয়োগের সময় অর্থ লেনদেন বা অনিয়মের অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করেছেন সিএইচসিপি কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার তুলনায় ২০২৩ সালের নিয়োগ সবচেয়ে স্বচ্ছ ছিল। লিখিত, মৌখিক, পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ সব ধাপ অতিক্রম করেই তারা যোগদান করেছেন। এমনকি নিয়োগ কমিটিতে থাকা কর্মকর্তারাও মৌখিকভাবে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ বলে স্বীকার করেছেন।
দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস ট্রাস্টের
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ৬৩৪ জনের অনুমোদন আছে, কাজ করছে, অর্থ মন্ত্রণালয় বেতনের টাকা দিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কোনো কারণে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। হয়তো আগের এমডির সময়ে ভুল হয়েছিল, আবার স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাবের কারণে মন্ত্রণালয় ভয়ও পাচ্ছে। কিন্তু যাই হোক, এদের বাদ দেওয়া যাবে না। যারা কাজ করছে তাদের বেতন না দেওয়া অযৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরিজীবী কেউ যদি ১৫ মাস বেতন না পান, তার অবস্থা কী দাঁড়াবে, তা সহজেই বোঝা যায়। এখন যা-ই হোক, সমাধান দ্রুত করতে হবে।
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে ৬৩৪ জন সিএইচসিপির বকেয়া বেতন কবে নাগাদ মিটবে, তাদের পদ রাজস্ব খাতে কবে যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
টিআই/এমজে