চাকরি থেকে ছাঁটাই করার অপচেষ্টার অভিযোগ তুলে ইসলামি ব্যাংকের ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন ব্যাংকটির হাজারো কর্মকর্তা। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে এ ঘোষণা দেন তারা। কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কর্মকর্তারা অংশ নেন।

পরে তারা প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমকে এই বিষয়ে একটা স্মারকলিপি দেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর ইসলামি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ‘স্পেশাল কম্পিটেন্সি অ্যাসেসমেন্ট’ পরীক্ষার তারিখ দেয়। পাশাপাশি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকে বাধ্যতামূলক করে নোটিশ জারি করেছে। নতুন তারিখ অনুযায়ী শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই পরীক্ষার আড়ালে ব্যাংকটিতে কর্মরত চট্টগ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে।

পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দিতে শুক্রবার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের যোগ দেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। এ সময় তাদের হাতে ছিল ‘শ্রম দিলাম, ঘাম দিলাম, আবার কেনো দেবে টান, ‘পরীক্ষা দেব তখনই, সবাই বসবে যখনই’, ‘কর্মস্থলে সুখ মানে শুধু বেতন না, বরং সম্মান, ভারসাম্য ও স্বীকৃতি, ‘একবার দিলাম পরীক্ষা, দুইবার দিতে রাজি না’, ‘সিএইচআরও জানেন নাকি, স্বৈরাচারের দোসর আপনি’, ‘হাইকোর্ট অবমাননা কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’-সহ নানা লেখা ব্যানার-ফেস্টুন।

এ সময় বক্তব্য দেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইস্কান্দার সুজন, এসএম এমদাদ হোসাইন, মোহাম্মদ ইকবাল, দিলরুবা আক্তার, শারমিন আক্তার, নাসরিন জান্নাত প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষার অজুহাতে ইসলামি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে।
একমাস আগে এই পরীক্ষার অবৈধ প্রয়াসের বিরুদ্ধে আমরা রিট করলে, মহামান্য হাইকোর্ট পরীক্ষা প্রক্রিয়া স্থগিত করে নিয়মিত প্রোমোশনাল পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়া, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককেও নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু হাইকোর্টের সেই আদেশ উপেক্ষা করে, ২২ সেপ্টেম্বর ইসলামি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্পেশাল কম্পিটেন্সি অ্যাসেসমেন্ট-পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা এবং অংশগ্রহণকে বাধ্যতামূলক করে নোটিশ জারি করেছে। নতুন তারিখ অনুযায়ী ২৭ সেপ্টেম্বর, এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নোটিশে বলা হয়েছে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ চাকরিতে বহাল থাকা এবং ক্যারিয়ার উন্নতির পূর্বশর্ত, এবং অনুপস্থিতদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।

এই পরিস্থিতি আমাদের মধ্যে যুক্তিসংগত ভয় ও আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য কুমন্তব্য পূর্ণ এবং বৈষম্যমূলক এবং আমাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা। এটি স্পষ্টভাবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ২৯ ও ৩১ অনুযায়ী সমতা, সম-অধিকার এবং সমান কর্মসংস্থানের নীতির লঙ্ঘন।

পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বক্তারা আরও বলেন, আমরা সরকারি সব নিয়ম মেনে ব্যাংকে যোগদান করেছি। যোগদানের পর ব্যাংকের পদোন্নতিসহ নানা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। সেজন্য চাকরি থেকে ছাঁটাই করার এই প্রহসন ও বৈষম্যমূলক পরীক্ষা আমরা দেব না। সারা বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা এই পরীক্ষায় অংশ নেবে না।

এমআর/এমএন