প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বর্তমান সময়ের দাবি মেটাতে এবং বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হলে জাতিসংঘকে ক্রমাগত বিকশিত ও অভিযোজিত হতে হবে। তবে একইসঙ্গে জোর দিয়ে বলতে চাই যে, সংস্কারের নামে যেন বহুপাক্ষিকতাকে দুর্বল না করা হয় বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বরকে অবহেলা না করা হয়। সংস্কারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত মাঠপর্যায়ে বাস্তব ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাজনৈতিক শোষণ, সম্পদ লুণ্ঠন ও কাঠামোগত বৈষম্য আজকের অসম উন্নয়নের বাস্তবতা তৈরি করেছে। আজ থেকে এক দশক পূর্বে যখন আমরা এজেন্ডা ২০৩০ অর্জনে একমত হয়েছিলাম। তখন আমরা পথ পরিবর্তন করে সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু আজকের বাস্তবতা হলো— টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট বাস্তবায়নের যে অগ্রগতি কাম্য ছিল তা মারাত্মকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। উন্নয়নে অর্থায়নের ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে এবং উন্নয়ন সহায়তার প্রবাহ কমছে। আমরা দাতা দেশসমূহকে এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের অঙ্গীকার পূরণ করতে আহ্বান জানাই।

তিনি আও বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় আছি। আমাদের মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে আমরা ওএইচআরএলএলএস-সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই। স্বল্পোন্নত দেশগুলো এবং ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর প্রতি আরও কার্যকর সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমরা এই দপ্তরকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানাই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একইসঙ্গে অনুদান, ঋণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সামাজিক ব্যবসা খাতকে বিপুলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এই নতুন পদ্ধতি দাতা ও গ্রহীতা উভয় দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে এবং উৎসাহব্যঞ্জক হবে। সৃজনশীলতার অতি উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের অভিযাত্রায় জাতিসংঘের অবদানকে সাধুবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার— জাতিসংঘের এই তিনটি স্তম্ভের প্রতিই আমরা আমাদের পূর্ণ আস্থা পুনর্ব্যক্ত করছি।

‘আমার বক্তব্যের শুরুতেই আমি বলেছিলাম যে, গত আট দশকে জাতিসংঘ বার বার দেখিয়েছে যে বহুপাক্ষিক কূটনীতি মানবজাতিকে আরও ভালোভাবে একসঙ্গে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। তবুও, এর ৮০তম বার্ষিকীতে আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে বহুপাক্ষিক কূটনীতি আজ নানা চাপে রয়েছে। প্রায়শই অসম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েন আবারও প্রমাণ করেছে যে বহুপাক্ষিক কূটনীতি আমাদের শেষ এবং সর্বোত্তম ভরসা। তাই বহুপাক্ষিক কূটনীতির ধারক ও বাহক জাতিসংঘকে উজ্জীবিত রাখতে আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও আন্তরিক আলোচনার আহ্বান জানাই।’

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের দাবি মেটাতে এবং বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হলে জাতিসংঘকে ক্রমাগত বিকশিত ও অভিযোজিত হতে হবে। এই মর্মে আমরা মহাসচিবের ইউএন৮০ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে একইসঙ্গে জোর দিয়ে বলতে চাই যে, সংস্কারের নামে যেন বহুপাক্ষিকতাকে দুর্বল না করা হয় বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বরকে অবহেলা না করা হয়। সংস্কারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত মাঠপর্যায়ে বাস্তব ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।

এমএসআই/এসএসএইচ