সুষম নগরায়ণ-উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি
বাংলাদেশের সুষম নগরায়ণ ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি বলে উল্লেখ করেছে আলোচকরা। পাশাপাশি নীতি ও পরিকল্পনা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন তারা।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে তাদের কনফারেন্স রুমে পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়ণের দিকে এগোচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৪০% মানুষ শহরে বসবাস করছে এবং আগামী দুই দশকে এটি ৬০% ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালটেন্ট পরিকল্পনাবিদ মো. আনিসুর রহমান তুহিন বলেন, বাংলাদেশে নগরায়ণ ৬০-এর দশকে শুরু হয়; সেই সময় নগরায়ণের হার ছিল মাত্র ৫.১৪%, যা ৯০-এর দশকে বেড়ে ১৯.৮% এবং ২০২৩ সালে প্রায় ৪০% এ পৌঁছেছে। তিনি উল্লেখ করেন, নগরায়ণকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ সহ বিভিন্ন বিকল্প পন্থা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, থাইল্যান্ডের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ টি এম নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির মাঝে আয়ের বৈষম্যের অন্যতম কারণ হলো অর্থনীতি ভিত্তিক এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা। প্রতিটি ফেডারেল শাসনব্যবস্থা মূলক দেশে প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব পরিষদ, আইনসভা ও মুখ্যমন্ত্রী থাকার ফলে একটি কাঠামো তৈরি হয় যা বিকেন্দ্রীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করে। এর ফলে রাজনৈতিক চাপ হ্রাস পায় এবং শহরের নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা পাওয়া যায়।
নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিনিয়র প্ল্যানার পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, সকল প্রশাসনিক কাঠামোকে সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব নয়। জলবায়ু-প্রবণ মানুষদের নগরমুখী প্রবণতা ঠেকাতে রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি সুষম অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আরো বলেন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘ন্যাশনাল স্প্যাশিয়াল প্ল্যানিং’ আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে তৈরি করা হবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সারাদেশে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য। অঞ্চল ভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি না হলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কার্যকর করা কঠিন হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বলেন, সুষম নগরায়ণ ও বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণও জরুরি।
ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেডের (ডিডিসি) পরিবেশ ও পরিবহন পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সুষম নগরায়ণ নিশ্চিতকরণে উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ অনেক আগে থেকে নেওয়া উচিত ছিল।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. মো. মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, বাংলাদেশের সুষম নগরায়ণ ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ জন্য নতুন শহর নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। বরং ঢাকার আশেপাশের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ও মানিকগঞ্জের মতো শহরগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। দেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও পৌরসভাগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষতা উন্নয়ন এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা না গেলে বিকেন্দ্রীকরণের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় এই বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, ঢাকায় মানুষের অযাচিত ভিড় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো নিরূপণ করা এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, আগামী নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশের সুষম নগরায়ণ ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ গুরুত্ব পায় এটা আশা করবো।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত বর্তমান সরকার উন্নয়নের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মুখে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বললেও বাস্তবে তারা ঢাকার উন্নয়ন কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের অনুকূল পরিবেশ ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটালে মানুষকে ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা সম্ভব। পাশাপাশি প্রতিটি জেলার জন্য পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি, সরকারের সকল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সমন্বিতভাবে কাজ না করলে বাংলাদেশের সুষম নগরায়ণ ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়।
এএসএস/এমএন