শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাবগুলোর যথাযথ প্রতিফলন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল ও ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের চলমান প্রতিবাদ বন্ধ করতে বন্দর কর্তৃপক্ষের পুলিশি হস্তক্ষেপের আহ্বানেরও নিন্দা জানানো হয়।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, শ্রম আইন ২০০৬-এর অগণতান্ত্রিক ধারা সংশোধনের জন্য স্কপ যে ১০১টি ধারার সুপারিশ দিয়েছে তা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাবি উপেক্ষিত রেখে কেবল ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সংক্রান্ত কিছু ধারার ওপর আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। শ্রম আইনে শ্রমিকদের মতামত ও প্রস্তাব যথাযথভাবে প্রতিফলিত না হলে তা হবে একতরফা এবং শ্রমিক স্বার্থবিরোধী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে নতুন প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, ২১-৫০ জন শ্রমিকবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ১০ জন শ্রমিক সদস্য নিয়ে, ৫১-১০০ জনে ১৫ জন, ১০১-২০০ জনে ২০ জন, ২০১-৪০০ জনে ৩০ জন, ৪০১-৫০০ জনে ৪০ জন, ৫০১-১০০০ জনে ৫০ জন, ১০০১-৩০০০ জনে ১০০ জন এবং ৩০০০ জনের বেশি শ্রমিকবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ৩০০ জন সদস্য নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। সিবিএ প্রসঙ্গে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে, কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি একটি মাত্র ইউনিয়ন থাকে, সেটিই সিবিএ হিসেবে কাজ করবে। আর একাধিক ইউনিয়ন থাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রাপ্ত ইউনিয়নকেই সিবিএ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক বলেন, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, ইপিজেডসহ সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে একই আইন প্রযোজ্য করা, দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ, আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, শ্রমিকদের আবাসন ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা, রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং অস্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করে স্থায়ী নিয়োগ নিশ্চিত করাসহ একাধিক মৌলিক দাবিতে শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন চলমান রয়েছে। শ্রমিকদের এসব ন্যায্য ও যুক্তিসংগত প্রস্তাব গ্রহণ না করলে আগামী দিনে আন্দোলনের মাধ্যমেই অধিকার আদায় করা হবে।

আহসান হাবিব বুলবুল শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, ন্যায়সংগত দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী চেতনাকে ধারণ করে আরও ৯টি দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে– সব খাতে মালিকানা নির্বিশেষে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও মজুরি বোর্ড গঠন করা; আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারসহ গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করা; আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের বিচার ও শ্রমিক হয়রানি-ছাঁটাই-কালো তালিকা বন্ধ করা; কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ ও আইএলও কনভেনশন ১৮৯, ১৯০ অনুসমর্থন করা; বন্ধ পাটকল-চিনিকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করা, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা; দুর্ঘটনায় আজীবন ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দুর্ঘটনা বীমা চালু করা; শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, রেশন, আবাসন, পেনশন, বেকার ভাতা চালু করা; আউটসোর্সিং ও অস্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করে স্থায়ী নিয়োগ নিশ্চিত করা, গিগ ওয়ার্কারদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ৯ দফা দাবি মেনে নেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদার, স্কপ নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, রাজেকুজ্জামান রতন, চৌধুরী আশিকুল আলম, সাইফুজ্জামান বাদশা প্রমুখ।

এমএইচএন/এসএসএইচ