রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার লালমাটিয়া থেকে এক যুবককে মধ্যরাতে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগী ওই যুবককে মিরপুর মডেল থানায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য দিয়ে হস্তান্তর করে। যদিও লালমাটিয়া থেকে অপহরণের তথ্য জানা নেই মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

এ ঘটনায় একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে লালমাটিয়া হাউজিং এলাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজের পেছনের সড়ক থেকে সাদা শার্ট ও হেলমেট পরিহিত এবং কালো শার্ট পরিহিত দুজন ব্যক্তি টেনে হিঁচড়ে এক ব্যক্তিকে জোর করে একটি সাদা প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। এ সময় কয়েক গজ দূরেই তার মোটরসাইকেলটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সিসিটিভি ফুটেজে ভুক্তভোগীর হাতে একটি হেলমেট দেখা যায়।

পরবর্তীতে স্থানীয়রা মোহাম্মদপুর থানায় খবর দিলে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম পুলিশ মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। পরবর্তীতে বুধবার রাত ২টার দিকে মিরপুর থানার এক পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায়।

এদিকে বুধবার মোহাম্মদপুর এলাকায় কোনো অভিযান চালায়নি মিরপুর থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ রোমন।

মোটরসাইকেলের নম্বর ও সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে ঢাকা পোস্ট। তথ্যপ্রযুক্তি সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই যুবকের নাম ইঞ্জিনিয়ার তরিকুল ইসলাম তাহসান। তিনি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের শেলটেক কম্পিউটার সিটিতে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসা করেন। পাশাপাশি তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তরিকুলের গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী সদরের কান্ডপাশার গ্রামে। তিনি খানাবাড়ির মালেক ফরাজির ছেলে।

ভুক্তভোগী তরিকুলের স্বজন আইনজীবী কামরুজ্জামান তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গতকাল তাকে প্রাইভেটকারে কে বা কারা তুলে নিয়ে গাড়ির ভেতরে মারধর করে তার ব্যাংক কার্ড ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তাকে মিরপুর থানায় জমা দেয় অপহরণকারীরা।

তিনি আরও বলেন, আজ সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে আদালতে নিয়ে আসে। কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তা কিছুই জানি না।

মোহাম্মদপুর থেকে তরিকুল ইসলামকে অপহরণ করা হলেও মিরপুর থানার ওসি সাজ্জাদ রোমন দাবি করেন, তরিকুলকে স্থানীয় ছাত্রদল, যুবদল এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগের মিছিলে জড়িত থাকার অভিযোগে থানায় নিয়ে আসে। তিনি নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে তারা জানান।

ওসি জানান, তরিকুলের কাছে একটি মোটরসাইকেলের চাবি পাওয়া যায়। পরে পুলিশ মোহাম্মদপুর থেকে মোটরসাইকেলটি নিয়ে আসে। তবে মোহাম্মদপুর থেকে তাকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য তার জানা নেই বলেও জানান তিনি। তরিকুল আদাবর থানার মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে ধারণা করা হচ্ছে । তবে তিনি কোনো এজাহারনামীয় আসামি নয়।

এদিকে স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে লালমাটিয়া মহিলা কলেজের পেছনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় সুজুকি জিক্সার মডেলের (ঢাকা মেট্রো-ল-২৮-৮৩৫৬) গাড়িটি উদ্ধার করেন মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম।

যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে আমি গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। পরবর্তীতে মিরপুর থানার এসআই মাহমুদ মোটরসাইকেলটি থানা থেকে নিয়ে যায়। বিষয়টি ওসি স্যার জানেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুন নবী জানান, আমরা জানতে পেরেছি মিরপুর এলাকায় একটি মবের সৃষ্টি হয়েছিল। রাতে আমি ডিউটিতে ছিলাম। পরে খবর এলো তরিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল মোহাম্মদপুর থানা হেফাজতে রয়েছে। পরে আমি এবং এএসআই সাইফুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানায় এসে নিজেদের জিম্মায় মোটরসাইকেলটি মিরপুর মডেল থানায় নিয়ে যাই।

মোহাম্মদপুর থেকে একজনকে কারা তুলে নিয়ে গেল এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ বলেন, মিরপুরের ওসি আমাকে জানালেন, আওয়ামী লীগের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার একটি মোটরসাইকেল এখানে রয়েছে। পরে মিরপুর থেকে অফিসার পাঠালে মোটরসাইকেলটি দিয়ে দেওয়া হয়। অপহরণ হয়েছে কি না, এ বিষয়টির ব্যাপারে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ বলতে পারবে।

এ ঘটনা জানতে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছি।

এসএএ/এআইএস