অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণে শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট দেখা যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

শনিবার (১৯ জুন) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিল্পখাতের জ্বালানি উৎসের ভবিষ্যৎ ঃ এলপিজি এবং এলএনজি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনরা এ কথা বলেন।

ওয়েবিনারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী যথাক্রমে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।

মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমাদের গ্যাসের রিজার্ভ ৬টিসিএফ এবং সারাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যে ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। বর্তমানে ৩৩০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাসের মধ্যে নিজস্ব উৎপাদিত গ্যাসের ৭৪ শতাংশ আসে নিজস্ব খাত থেকে, বাকি ২৬ শতাংশ আসে এলএনজি থেকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালে দেশীয় উৎপাদন হবে ১৬.৫ শতাংশ এবং আমদানিখাত থেকে আসবে ৮৩ শতাংশ। সেক্ষেত্রে শিল্পখাতসহ সব খাতে ব্যয় বাড়বে। এমন বাস্তবতায় অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। 

তিনি বলেন, গ্যাস ব্যবহারে মিটার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে, সিস্টেম লস ও চুরি কামানো যেত, যার মাধ্যমে আরো ১০-১২ লাখ মিটার গ্যাস লাগানো যাবে, সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, এলপিজি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব এবং আমাদের দেশে বর্তমানে ১.২ মিলিয়ন টন এলপিজি ব্যবহৃত হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে এলপিজি দাম নির্ধারণে প্রথমবার একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং জুলাই মাসের ৭/৮ তারিখে এলপিজি’র দাম পুনর্বিবেচনার বৈঠক শুরু হবে। 

ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, সরকার ঘোষিত ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিল্পখাতের চাহিদামতো জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এখাতে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পখাতে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ও এলএনজি আমদানি এবং উৎপাদনের ওপর আরো বেশি হারে গুরুত্বারোপ করতে হবে। 

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, এলএনজি ব্যবসায় ঝুঁকি কম থাকায় বর্তমানে সবাই এর দিকে ঝুঁকছে, এলপিজি’র বাজার প্রায় ১২ লাখ টন এবং ২৯টি কোম্পানি স্থানীয় বাজারে এলপিজি অপারেটর হিসেবে কাজ করছে। তবে ৫৬টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ছোট ছোট জাহাজে এলপিজি আমদানি করায় খরচ বাড়ছে, তবে মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে, এ খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পখাতে এলপিজি’র ব্যবহার এখনও অনেক কম, তবে এলপিজি ও এলএনজি’র টার্মিনাল স্থাপন এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দাম কমানো সম্ভব। তিনি জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ মেট্রিকটন এলপিজি আমদানি হয়েছিল, যার মধ্যে ১ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে শিল্পখাতে এবং সিরামিক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, স্টিল ও চা শিল্পেই বেশি ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে এলপিজি খাতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হয়েছে।

আনিছুর রহমান আরো বলেন, ব্যবসাবান্ধব হওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে নীতিমালা ও আইন সংস্কার করা হবে। এলপিজি অপারেটদের অনুমোদনের জন্য ১৮ ধরনের লাইসেন্স দরকার এবং বাৎসরিক নবায়ন ফি দিতে হয় ১ কোটির বেশি, যা কমানো প্রয়োজন। গ্যাস সংযোগ নিতে তিতাসে সংস্কার কাজ চালানো হচ্ছে, বর্তমানে শিল্পখাতে গ্যাস সংযোগ নিতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় না এবং পরিকল্পিত শিল্প অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে।

আরএম/জেডএস