আন্তর্জাতিক কমিটি রেড ক্রস (আইসিআরসি) ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে তিন মাসব্যাপী সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সোমবার (২১ জুন) রেড ক্রিসেন্টের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মানবসম্পদ ও বৈষয়িক অনুদানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সেবার সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশে এই কার্যক্রম শুরু করেছে আইসিআরসি ও বিডিআরসিএস। কোভিড-১৯ মহামারিতে পার্বত্য জেলাগুলোর তিনটি সদর হাসপাতাল এবং ২২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেসব রোগীরা প্রতিনিয়ত সেবা নিতে আসছেন তারা এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হচ্ছেন।

রেড ক্রিসেন্ট জানায়, গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আইসিআরসি এবং বিডিআরসিএস খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংক্রমণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (আইপিসি) প্রোগ্রামের প্রথম ধাপ বাস্তবায়িত করে। এর ফলে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত আসা ১৬ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রকল্পটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইসিআরসি বাংলাদেশের ওয়াটার অ্যান্ড হ্যাবিট্যাট ডেলেগেট মাসিমো রুশো বলেন, আইপিসি প্রোগ্রামের এই ধাপে গত বছরের কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা ও শিখন বিবেচনায় রেখে যেন আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল জুড়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর-এর (এসওপি) ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণ, জীবাণুনাশক সরঞ্জাম এবং প্রধান স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি। এর লক্ষ্য হচ্ছে সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মিলে সব জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা, যেন তারা করোনার কারণে সৃষ্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে।

সংস্থাটি আরও জানায়, ৩১টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের প্রায় ১৬০ জন ক্লিনারকে সম্পূর্ণ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে (ব্যক্তিগত সুরক্ষা, পরিষ্কার এবং নির্বীজন পদ্ধতি) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের আওতাধীন অনুদানের অংশ হিসেবে ক্লোরিন, গ্লোভস, ফেস শিল্ড, গাম বুট এবং মাস্ক ইত্যাদি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মহামারিতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২০০ পরিবারের মাঝে পরিচ্ছন্নতা সামগ্রীও বিতরণ করা হবে।

কোভিড-১৯ এর বাস্তবতাকে মাথায় রেখে প্রকল্পটির বহুমুখী স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে বিডিআরসিএস স্বেচ্ছাসেবীদের দূরবর্তী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যারা পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেবে। এছাড়াও, প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) এবং যথোপযুক্ত জীবাণুনাশক উপকরণ এবং সরঞ্জাম নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিডিআরসিএস-এর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের এই প্রকল্পে ক্লিনাররা শুধু জ্ঞানার্জনই করছেন না। এর মাধ্যমে সংক্রমণ ও নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মত আত্মবিশ্বাসও পাচ্ছেন তারা। এই ধাপেও মাস্কের উপযুক্ত ব্যবহার ও শারীরিক দূরত্বের ওপর জোর দেওয়া হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে এই সংক্রমণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পটি সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এনআই/এমএইচএস