টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ না হলে যান চলাচল অচল করার হুঁশিয়ারি
টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর তুরাগ নদের ওপর স্থায়ীভাবে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ না হলে এ রুট দিয়ে যাতায়াতকারী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে অচল করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন টঙ্গী বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। এ সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অবিলম্বে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ দাবি তুলে ধরেন হাজী আব্দুস সাত্তার।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, টঙ্গী বাজার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র, যা আশপাশের ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত ক্ষুদ্র, খুচরা ও বৃহত্তম পাইকারি ব্যবসায়ীদের প্রধান মোকাম। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ এ বাজারে কেনাকাটা করতে আসে।
‘ক্রেতা-বিক্রেতা এ বাজারে আসার একমাত্র পথ ছিল তুরাগ নদের ওপর টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর সেতু। বর্তমানে তুরাগ নদীর ওপর অপরিকল্পিত বিআরটির উচ্চ ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে আগের দুটি আরসিসি সেতু ভেঙে ফেলা হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ীদের জন্য মারাত্মক অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
আব্দুস সাত্তার বলেন, শুধু টঙ্গী বাজারের জন্য নয়, প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখ লাখ মানুষ টঙ্গী থেকে উত্তরা এবং উত্তরা থেকে টঙ্গী যাতায়াত করেন। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থী। তাদের জন্য এ সেতু ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতের পথ। এ ছাড়া অফিস-আদালতের চাকরিজীবী মহিলা ও পুরুষ, যারা প্রতিদিন তাদের কর্মস্থলে যেতে টঙ্গী থেকে উত্তরা এবং উত্তরা থেকে টঙ্গী আসেন, তাদের জন্যও সেতুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ ছিল। এমনকি শারীরিকভাবে দুর্বল এবং প্রবীণ ব্যক্তিরাও যাতায়াতের জন্য এ সেতুর ওপর নির্ভর করতেন। সেতু ভেঙে ফেলার ফলে তাদের যাতায়াতে ব্যাপক কষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, টঙ্গীতে কোনো ভালো হাসপাতাল না থাকার কারণে চিকিৎসার জন্য আমাদের উত্তরার হাসপাতালগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়।
‘অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়– সময়মতো রোগী হাসপাতালে নিতে না পারায় পথেই অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করছেন। বিআরটির সু-উচ্চ ফ্লাইওভারে যাত্রীরা দিনে ও রাতে ছিনতাইকারীদের উৎপাতের শিকার হচ্ছেন। চলাচলের সময় ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে অঙ্গহানি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমনকি বিআরটি রাস্তা পারাপারে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এত কিছু জানার পরও সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আমরা উচ্চতর ব্রিজটি নির্মাণের পর থেকেই আলাদাভাবে আরসিসি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। সম্প্রতি সেতুর দাবিতে সব ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন এবং আন্দোলন করেছি। বিক্ষোভের মুখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি সর্বমহলে জানিয়ে সমস্যার সমাধান করবেন বলেও আশ্বস্ত করেন। কিন্তু অদ্যাবধি এ সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি। বরং ওই কর্মকর্তারা ঘাপটি মেরে বসে আছেন। এরপর আমরা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপদসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আবেদন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের এ দাবির কোনো সদুত্তর দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
‘তাই শিগগিরই টঙ্গীর তুরাগ নদের ওপর আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়া হলে আমরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে বাধ্য হব। এমনকি ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে ডিআরইউ চত্বরে তারা মানববন্ধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন টঙ্গী থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাশেদুল ইসলাম কিরণ এবং ব্যবসায়ী ও টঙ্গীর সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
এআর/এসএসএইচ