ডিজিটাল উদ্ভাবনে সহযোগিতা জোরদার করতে শ্রীলঙ্কাকে টেক করিডোর তৈরির প্রস্তাব দি‌য়ে‌ছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) কলম্বোতে দুই দে‌শের পররাষ্ট্র দপ্তরের পরামর্শক সভায় (এফওসি) এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জা‌নি‌য়ে‌ছে, সভায় পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব অরুণী রানারাজা নিজ নিজ দে‌শের প‌ক্ষে নেতৃত্ব দেন।

প্রায় ৮ বছর পর হওয়া সভায় কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য চাষ, যুব বিষয়ক, সংস্কৃতি এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

দুই দেশের অর্থনীতিতে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করে সবুজ পর্যটনের উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। চা ও বৌদ্ধ পর্যটন সার্কিটসহ যৌথ পর্যটন উদ্যোগ উন্নয়ন এবং পর্যটন সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার বিপুল বিনিয়োগ ও প্রবাসী উপস্থিতির কথা তুলে ধরে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের শ্রীলঙ্কার উন্নয়ন প্রকল্প, লজিস্টিক সেবা, চাষাবাদ এবং পর্যটন সম্পর্কিত ব্যবসায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক কল্যাণে অবদান রাখতে ব্যাংকিং পরিষেবায় সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুযোগ-সুবিধা নিয়েও আলোচনা হয়। 

শ্রীলঙ্কার বিদ্যমান বিনিয়োগের প্রশংসা করে বাংলাদেশ তার ইপিজেড, এসইজেড এবং এপিআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস, হসপিটালিটি, পর্যটন, অটোমোবাইল এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া এবং জুতোসহ উচ্চ-সম্ভাবনাময় খাতে শ্রীলঙ্কা থেকে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।

সভায় বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সহজতর করার অনুরোধ জানিয়েছে। উভয় পক্ষই বাণিজ্য সহজতর করার জন্য একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে এবং বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচল সম্পর্কিত যৌথ ওয়ার্ক গ্রুপের বৈঠক দ্রুত আহ্বান করতে সম্মত হয়েছে। গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য উভয় পক্ষই বেসরকারি খাত এবং তাদের চেম্বারগুলোর মধ্যে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।

উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য উভয় পক্ষই বকেয়া সমস্ত আইনি চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। যোগাযোগের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে উভয় পক্ষ চট্টগ্রাম ও কলম্বোর মধ্যে বন্দর যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনার সঙ্গে নৌপরিবহন খাতকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা অন্বেষণ করেছে।

উভয় পক্ষই কৃষি ও মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুযোগের কথা স্বীকার করেছে। জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার এবং জ্ঞান ও বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের মাধ্যমে মিঠা পানির মাছ চাষের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

সভায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা নিয়ে আরও আলোচনা হয় সভায়। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশি নার্সদের প্রশিক্ষণের জন্য বার্ষিক স্লটের সংখ্যা বাড়ানোর শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। উভয় পক্ষই যুব উন্নয়নকে জোরদার করতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। অ্যাথলেটিক্স, ক্রীড়া বিজ্ঞান ও ক্রিকেট বিষয়ে ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

উভয় পক্ষ দুটি জাতীয় সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা আঞ্চলিক সহযোগিতা বিশেষ করে সার্ক, বিমসটেক এবং আইওআরএ'র মাধ্যমে জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। 

প্রতিনিধি দলে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস উপস্থিত ছিলেন।

প‌রে পররাষ্ট্র সচিব শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ড. হরিণী আমরসুরিয়া এবং পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপমন্ত্রী অরুণ হেমচন্দ্রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। 

এনআই/এমএন