দুই কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ মালয়েশিয়া প্রবাসীদের
মালয়েশিয়াতে মেডিসিরাম ও কাওয়াগুচি কোম্পানি কর্তৃক নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মাইগ্রেন্ট ওয়েলফেয়ার নেটওয়ার্ক মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশভিত্তিক একটি বাংলাদেশি প্রবাসী নেটওয়ার্ক।
আজ (সোমবার) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়া এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় আধুনিক দাসত্বের শিকার ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের কার্যক্রমের কারণে শ্রমিকরা প্রতিশোধমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন।
মানববন্ধনে মেডিসিরাম ক্ম্পোনির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, বছরের পর বছর শ্রমিকরা বিলম্বিত বেতন, হুমকি, নির্যাতন ও অমানবিক বাসস্থানের শিকার হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কোম্পানি তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে রাখায় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কাজের অনুমতিপত্র নবায়ন না হওয়ায় অনেকে অবৈধ হয়ে গেছেন। কোম্পানি একবার রিক্রুটমেন্ট ফি ফেরত দিলেও, নভেম্বর ২০২৫ এর প্রথম সপ্তাহে ১৫ জন
শ্রমিককে জোরপূর্বক দেশে পাঠানো হয়। কারণ তারা পারমিট নবায়ন ও আগের শ্রমিকদের বকেয়া ফেরতের দাবি তুলেছিল।
এ ছাড়া, কাওয়াগুচি কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, শ্রমিকরা প্রচুর রিক্রুটমেন্ট ফি পরিশোধ করেও ২০২২ সাল থেকে বেতন অনিয়মের শিকার হন এবং সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ৭ মাস কোনো বেতন পাননি এই ক্ম্পোনি থেকে। ৩০৮ জন শ্রমিককে ওপরে উল্লিখিত ক্রেতারা কিছু ক্ষতিপূরণ ও রিক্রুটমেন্ট ফি ফেরত দেন, তবে বকেয়া বেতন এখনো পরিশোধ হয়নি।
মালয়েশিয়ার শ্রম দপ্তর গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে এক সমঝোতা বৈঠকের পর সম্মতিপত্র জারি করে। তবুও কোম্পানির তাইওয়ানি মালিক এখনো ২৫১ জন শ্রমিকের কাছে ৩০ লাখ রিঙ্গিত দেনা এবং কোম্পানি বকেয়া পরিশোধ না করে বন্ধ ঘোষণা করে।
সম্প্রতি মেডিসিরাম কোম্পানি থেকে বহিষ্কৃত শ্রমিক প্রতিনিধি নিরঞ্জন বলেন, আমরা মানুষ হিসেবে অধিকার চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ বা পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে। বেতন ও রিক্রুটমেন্ট ফি ফেরতের দাবিতে হেনস্থা করা হয়েছে। বৈধ অবস্থান চাইলে ও সহকর্মীদের ক্ষতিপূরণ চাইলেই হুমকি দিয়ে ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়েছে। কথা বললেই ফেরত পাঠানো হয়।
কাওয়াগুচিতে কাজ করা প্রাক্তন শ্রমিক ওমর ফারুক বলেন, আমাদের পাসপোর্ট জব্দ করে রাখা হয়েছিল, টানা সাত মাস বেতন দেয়নি, আমরা ক্ষুধার্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার সাহায্য চেয়েও কোনো ফল পাইনি। কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখনো বকেয়া বেতন পাইনি ।
মানববন্ধন থেকে ৬টি দাবি তুলে ধরা হয়
১) মেডিসিরাম শ্রমিকদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে কারণ তার কাজের পারমিট নবায়ন ও সহকর্মীদের ফি ফেরতের দাবি তুলেছিল।
২) জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং শ্রমিকদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দায়িত্বশীল নতুন নিয়োগদাতার কাছে স্থানান্তরে সহায়তা করতে হবে।
৩) মেডিসিরাম ও এর মালিক আরুমুগাম সাঙ্গিয়াহ দাতু এবং তার কোম্পানিগুলোর ওপর বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
৪) কাওয়াগুচির সকল প্রাক্তন শ্রমিককে জেটিকে সম্মতিপত্র অনুযায়ী বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে হবে এবং মেডিসিরামের প্রাক্তন শ্রমিকদের রিক্রুটমেন্ট ফি ফেরত দিতে হবে ।
৫) কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ হাইকমিশনের কার্যক্রমে সংস্কার আনতে হবে যাতে তারা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে।
৬) বাংলাদেশ রিক্রুটমেন্ট ও মাইগ্রেশন ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার করতে হবে, যাতে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষাই মূল লক্ষ্য হয়, কেবল রেমিট্যান্স নয়।
৭) আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের পূর্ণ স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে যেন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা পায়।
এনআই/এনএফ