হাকালুকি হাওরের গাছ কাটা বন্ধে পবার ৫ সুপারিশ
পবার আলোচনা সভা
হাকালুকি হাওর এলাকায় (ইসিএ) বাঁধ নির্মাণের নামে বিভিন্ন প্রজাতির আনুমানিক ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারিভাবে একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ ৫ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশবাদী পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
একইসঙ্গে ঘটনাটি পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নিজ এলাকায় হওয়ায় ওই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপনেরও অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিজ্ঞাপন
পবার অন্যান্য সুপারিশ গুলো হচ্ছে- ইসিএ হিসেবে ঘোষিত হাকালুকি হাওরের বৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় সব ইজারা বাতিল করা; হাওরের জলাভূমি ও প্রাণ-বৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনায় হাওরবাসীকে যুক্ত করা ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক সংরক্ষণ উদ্যোগ নেওয়া; হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া ও ইকোসিস্টেম বজায় রাখতে হাওরের পানি, উদ্ভিদ, ধান, ভাসমান এবং ক্ষুদ্র অণুজীবদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং যেখানে গাছ কাটা হয়েছে সেখানে আবার নতুন করে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা ও সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
মঙ্গলবার (২২ জুন) পবা আয়োজিত হাকালুকি হাওরে বৃক্ষ নিধনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে এক আলোচনা সভা থেকে সুপারিশগুলো জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় বক্তারা বলেন, হাকালুকি হাওরে প্রায় ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এটি একটি ভয়াবহ চিত্র। পুরো বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে শঙ্কিত, দেশে-বিদেশে যখন বৃক্ষ রোপণের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে হাকালুকি হাওরের মালাম বিলে ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হলো!
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, যারা এজন্য দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। মালাম বিলের ইজারা যারা নিয়েছেন শর্ত ভঙ্গ করার কারণে তাদের ইজারা বাতিল করে তাদের কাছ থেকেই ক্ষতিপূরণ আদায় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
বক্তারা বলেন, ইজারা প্রথার কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। দেশের হাওরগুলোতে ইজারা প্রথা বাতিল করে সুন্দর ব্যবস্থাপনা করা গেলে মাছের উৎপাদন ২০ ভাগ বেড়ে যাবে। এই ইজারার মাধ্যমে যে সরকার খুব বেশি রাজস্ব আয় করছে, তা কিন্তু নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হচ্ছে মানুষ, প্রাণ-প্রকৃতি, ও জীব বৈচিত্র্যের। জলজ বৃক্ষ নিধনের ফলে হাওরের পাখিদের বিচরণ ও আবাসস্থলের পাশাপাশি খাদ্য নিয়েও সংকট দেখা যাচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) এক জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, গত দুই দশকে হাকালুকি হাওরে পাখির বিচরণ কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। উন্নয়ন করতে যদি পরিবেশ ও বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়, তবে তা টেকসই হবে না। হাওরে উন্নয়নের ফলে কী ধরনের বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।
আলোচনায় যুক্ত ছিলেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সম্পাদক পাভেল পার্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন, দৈনিক ইত্তেফাকের বড়লেখা উপজেলার সংবাদদাতা তপন কুমার দাস, দৈনিক দেশরূপান্তরের মৌলভীবাজারের পরিবেশ সাংবাদিক রিপন দে, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (মৌলভীবাজার), লেখক ও সাংবাদিক আকমল হোসেন নিপু, পবার সম্পাদক ও গ্রিনফোর্সের সমন্বয়ক মেসবাহ সুমন, বিশিষ্ট কবি ও লেখক পরিবেশকর্মী শাহেদ কায়েস, বানিপার সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুস সোবহান প্রমুখ।
এমএইচএন/এমএইচএস