ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশে সংস্কারের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় সরকারি কর্মকর্তা বা আমলাতন্ত্র।  

তিনি বলেন, সবগুলো সংস্কার কমিশন থেকেই আশু বাস্তবায়নযোগ্য কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। কিন্তু প্রায় কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাহলে শুধুমাত্র রাজনৈতিক শক্তিকে দায় দিয়ে কী লাভ।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকাটা ছিল যে, তারা নিজেদের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে। নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে সেখানে কোথায় প্রতিবন্ধকতা? আমরা সবসময় বলে আসছি যে দেশের প্রতিটা মানুষ সংস্কার চায়। কিন্তু যারা সংস্কার চায় তাদের ভেতরে যে প্রতিরোধমূলক শক্তি আছে সেটা কিন্তু আমরা উপলব্ধি করতে চাইনি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বা প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করবে তথ্য মন্ত্রানালয়। এই বাস্তবায়ন বা ভূমিকাটা আসলে কারা নেবেন? সেটা কারা জানেন? সরকারি কর্মকর্তা বা আমলাতন্ত্র। আমলাতন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশের সংস্কারের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে  ধানমন্ডির মাইডাস ভবনের টিআইবি কার্যালয়ে “কর্তৃত্ববাদ পতন-পরবর্তী বাংলাদেশের গণমাধ্যমের পরিস্থিতি” শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের শতাধিক প্রস্তাবনা। তার মধ্যে থেকে তারা বললেন যে ২৮টি আইটেম সিলেক্ট করেছি, যেগুলা বাস্তবায়ন করছি। প্রাধান্য দিয়ে সেই ২৮টির মধ্যে শীর্ষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, ‘টয়লেট পরিষ্কার রাখতে হবে,’ এটা হচ্ছে প্রাধান্য।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার এখন গণমাধ্যমের বড় প্রতিপক্ষ। অথচ প্রতিপক্ষ নয়, গণমাধ্যমের হওয়ার কথা সহায়ক শক্তি। তিনি আরও বলেন, আমাদের পেশাটা (গণমাধ্যম) রুগ্ন হয়ে গেছে। কেন রোগ হয়েছে? দুইটা কারণে রোগ হয়— একটা হচ্ছে যে রোগের ভাইরাস আসে বা ব্যক্তির শরীরের বাইরের থেকে যে উপাদানগুলো আসে সেটা থেকে আসে রোগ হয়। 

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদের বিকাশ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি যেটা চোরতন্ত্র... চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তার মানে এই না যে কর্তৃত্ববাদের যে সংস্কৃতি এবং চর্চা সেটা থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছে। পাঁচ আগস্টের আগেও যেটা দেখছি, এখনো সেটা দেখছি।

সংস্কারের বিষয়ে কথা বলেতি গিয়ে তিনি আরও বলেন, দুদক সংস্কার কমিশনে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। রাজনৈতিক দলগুলো শতভাগ একমত হয়েছে যে প্রস্তাবনায় সেটি হচ্ছে দুদকের স্বাধীনতার পাশাপাশি দুদকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। 

‘প্রস্তাবনার মধ্যেই ছিল দুদকের জন্য একটা পর্যালোচনা, বাছাই পর্যালোচনা কমিটি করা হবে। সরকার একটা অর্ডিনেন্স পাস করে ফেলেছে। সরকার বেশ কিছু বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে। এই পর্যন্ত আমি অন্ততপক্ষে আট থেকে দশটি অর্ডিনেন্সের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরেছি। প্রতিটা অর্ডিনেন্সের ক্ষেত্রেই ধারাবাহিক বিশ্লেষণ করার পর সরকার রাজি হয়েছে। সবাই বলেছে খুব ভালো পরামর্শ। আমরা এগুলোকেসহ বিবেচনায় নেবো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রায় শতভাগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।  

তিনি বলেন, আমরা যত সংস্কারের কথা বলি না কেন বাংলাদেশের সংস্কার তখনই হবে, ততটুকুই হবে, যতটুকু বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র চায় এবং এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে রাজনৈতিক শক্তি যারা আসলে ওয়েটিং ইন দা উইংস কনসিডারিং দ্যাট ইট ইজ আওয়ার টাইম। তারা কিন্তু এর পেছনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে সংস্কারের নামে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেটা যদি কিছু বাস্তবায়িত হতে হয়, সেটা তখনই হবে, যখন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়।  

জেইউ/এমএন/এনএফ