আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস
শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে সুরক্ষা অধিকার বঞ্চনার মূলেই ‘পরিচয়হীনতা’
বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের গড় হার ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ দেশে এখনও জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষই নিবন্ধনহীন, আর তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে স্কুল ভর্তি থেকে স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত সব জায়গায়। এমনকি ব্যক্তি পরিচয় না থাকায় শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, মানবপাচারের ঝুঁকিও বাড়ছে বলে জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দিবসটি উপলক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে, ‘হিউম্যান রাইটস : আওয়ার এভরিডে এসেনসিয়ালস’।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের গড় হার ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ এখনো জনসংখ্যার অর্ধেক নিবন্ধনহীন, আর তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে স্কুল ভর্তি থেকে স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত সব জায়গায়। পরিচয় না থাকায় শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, মানবপাচারের ঝুঁকিও বাড়ে। একই দৃশ্য মৃত্যু নিবন্ধনেও– দেশে অর্ধেকের বেশি মৃত্যুর কোনো আনুষ্ঠানিক নথি নেই। ফলে উত্তরাধিকার প্রমাণ, সম্পত্তির ভাগ, পারিবারিক বিরোধ– সবকিছুতেই জটিলতা তৈরি হচ্ছে। গ্রাম, চর, পাহাড়ি এলাকা আর শহরের বস্তিতে এই নিবন্ধন হার আরও কম।
বিজ্ঞাপন
এতে বলা হয়, মানবাধিকার আসলে আমাদের প্রতিদিনের অপরিহার্য বিষয়। আর সেই অধিকার রক্ষার প্রথম ধাপই হলো আইনগত পরিচয় নিশ্চিত করা। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শতভাগ না হলে কেউই রাষ্ট্রের কাছে সম্পূর্ণ দৃশ্যমান নয়, আর যতক্ষণ পরিচয়হীনতা থাকবে– শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সুরক্ষা, এমনকি সামাজিক নিরাপত্তার মতো মৌলিক অধিকারও থাকবে অনিশ্চিত।
প্রজ্ঞা আরও জানিয়েছে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ সংশোধন করে দায়িত্ব পরিবার থেকে সরিয়ে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর দিলে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে। দেশের মোট জন্মের প্রায় ৬৭ শতাংশই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়– অর্থাৎ আইন পরিবর্তন করলে এসব শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। এতে সিআরভিএস দশকের শতভাগ নিবন্ধন লক্ষ্য পূরণের গতি বাড়বে, পাশাপাশি এসডিজি ১৬.৯– সব মানুষের জন্য বৈধ পরিচয় নিশ্চিতকরণ– অর্জনও ত্বরান্বিত হবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে এক প্রতিক্রিয়ায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘন শুরু হয় পরিচয়হীনতা থেকে। আইন সংস্কারের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম জনবান্ধব করতে হবে, যাতে কোনো মানুষই পরিচয়হীন না থাকে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ সব মৌলিক অধিকার সমানভাবে ভোগ করতে পারে।”
টিআই/বিআরইউ