বাসের টিকিটে মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন!
টিকিট দেখে ছেড়ে দেওয়া হয় মাইক্রোবাস
দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২১ জুন ঢাকার আশপাশের চারটিসহ সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। লকডাউনের কারণে গণপরিবহন ও ট্রেন বন্ধ থাকায় দেশের অন্য জেলার সঙ্গে কার্যত ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও পিকআপ ভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রী আনা-নেওয়া করছে গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
রাস্তায় নিজেদের গাড়ি যেন আটকানো না হয়, সেজন্য আগে থেকে সব ব্যবস্থা করে রাখছেন তারা। বিভিন্ন পরিবহন মালিকরা সড়ক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাত্রী আনা-নেওয়া করছেন। নিজেদের গাড়ি রাস্তায় আটকানো ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের টাকা দিচ্ছেন তারা। সড়কে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদন্যরা যেন তাদের মাইক্রোবাস চিনতে পারেন, সেজন্য পরিবহন কর্তৃপক্ষ মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বাসের টিকিট দিচ্ছে। যাত্রীদের কাছে থাকা ওই টিকিট দেখে হাইওয়ে পুলিশ মাইক্রোবাস না থামিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে!
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৫ জুন) রাজধানীর গাবতলী, সায়দাবাদ ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা ঘুরে মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় আসা যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞাপন
কুড়িল বিশ্বরোড ও সায়েদাবাদ এলাকায় দেখা যায়, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যাত্রীরা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে করে ঢাকায় আসছেন। আবার কুড়িল বিশ্বরোড ও সায়েদাবাদ থেকে যাত্রীরা একই পরিবহনে করে ঢাকার বাইরে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে মাইক্রোবাসে করে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতায়াত করতে ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা। আর পিকআপ ভ্যানে যাতায়াত করতে ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
জানা যায়, মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় যাত্রী আনা-নেওয়া করছে বিভিন্ন জেলার গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তারা রেন্ট-এ কারের মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঢাকা ও নির্দিষ্ট জেলা শহরে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের মাধ্যমে যাত্রী আনা-নেওয়া করছেন। কমিশনের ভিত্তিতে যাত্রী আনা-নেওয়ার এ বিশেষ প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার দুপুর ২টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মাইক্রোবাসে করে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে এসে নেমেছেন মো. সুমন নামে একজন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়ালেই বিভিন্ন বাস কাউন্টারের লোকজন ঢাকায় যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের ডাক দেন। তাদের ডাক শুনে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মহাখালীগামী তিতাস ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারে যাই, তখন তারা মাইক্রোবাসে ঢাকায় যাব কি না জানতে চায়। রাজি হলে তারা ৫০০ টাকা ভাড়া চায়। কাউন্টারের লোকজনের কথা মতো ৫০০ টাকা ভাড়া দিই। পরে তারা আমার হাতে ‘তিতাস ট্রান্সপোর্ট’ বাসের একটি টিকিট ধরিয়ে দেয়। সেই টিকিটে ১৬০ টাকা ভাড়া লেখা থাকলেও তা কেটে ৫০০ টাকা লিখে দেয় তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিতাস ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ মাইক্রোবাসে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার মহাখালীতে নিয়মিত যাত্রী আনা-নেওয়া করছে। লকডাউনের কারণে বাস বন্ধ থাকায় জেলার বিভিন্ন রেন্ট-এ কার থেকে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাড়া করেছে তিতাস ট্রান্সপোর্ট। তারা নিজেদের বাসের টিকিট ব্যবহার করে ঢাকায় যাত্রী আনা নেওয়া করছেন।
তিতাস ট্রান্সপোর্টের টিকিট ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় যাত্রী নিয়ে আসা একটি মাইক্রোবাসের চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি রেন্ট-এ কারের মাইক্রোবাস চালক। তিতাস ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের ঢাকায় যাত্রী নিয়ে আসা, আবার ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাড়া করেছে। প্রতি গাড়িতে ১১ জন যাত্রী আনা-নেওয়া করা হয়। ভাড়ার অর্ধেক টাকা তারা পায়, বাকি অর্ধেক আমরা পাই। দিনে তিন থেকে চারটি ট্রিপ আনছি আমরা। রাস্তায় কোনো সমস্যায় পড়লে বা পুলিশ গাড়ি আটকালে তিতাস ট্রান্সপোর্টের টিকিট দেখালেই ছেড়ে দেয়।
ঢাকায় আসা যাত্রী ও মাইক্রোবাস চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় যাত্রী নিয়ে আসতে রাস্তায় কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। চেকিং সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা নেই। কোথাও হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি আটকালে চালকরা সহজেই তা ম্যানেজ করে ফেলছেন।
হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে মাইক্রোবাসে করে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসেছেন নিলয় কর্মকার। তিনি বলেন, মাইক্রোবাসে ঢাকায় আসতে কোনো সমস্যাই হয়নি। পুরো রাস্তায় কোনো ধরনের চেকিং না হলেও নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়ায় আমাদের মাইক্রোবাসটি হাইওয়ে পুলিশ থামিয়েছিল। পরে চালক গাড়ি থেকে নেমে বাসের টিকিট দেখিয়ে মাত্র পাঁচ মিনিটে বিষয়টি সমাধান করে ফেলেন।
মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন জেলার বাস পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে তারা ঢাকায় যাত্রী আনা-নেওয়া করছেন। বাস কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই কথা বলে রাস্তায় সব ঠিক করে রাখছে। তাই রাস্তায় তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। সমস্যায় পড়লে নির্দিষ্ট বাসের টিকিট দেখালেই তারা ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন।
গত ২১ জুন করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকার আশপাশের চারটিসহ সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। জেলাগুলোয় আগামী ৯ দিন জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশে দূরপাল্লার বাস ও নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন ও শপিংমল খোলা রয়েছে।
এমএসি/এসএসএইচ/জেএস