করোনাভাইরাসের সংক্রমণে লাগাম টানতে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের প্রথম দিনে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বিধিনিষেধে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মী আনা-নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানেনি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এতে বিপাকে পড়ে অফিসগামী মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা-মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন।

সোমবার (২৮ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টন, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা ও গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ফাঁকা সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি রিকশা-মোটরসাইকেল দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে। গণপরিবহন না থাকায় এসব এলাকায় মানুষ হেঁটে যাতায়াতের পাশাপাশি রিকশা কিংবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে অফিসে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তাদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আবার অনেককে ভ্যান কিংবা মালবাহী পিকআপ ভ্যানে করেও যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর কাকরাইল মোড় থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত দুইশ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আদিত্য রিমন। তিনি জানান, প্রায় আধাঘণ্টা অনেকগুলো রিকশার সঙ্গে ধরদামের পর এই ভাড়ায় আসতে একজন রিকশাচালক রাজি হন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরেক চাকরিজীবী উন্মি আহমেদ জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে তার কর্মস্থল গুলশান-১ আসতে রিকশায় ভাড়া নিয়েছে একশ ৮০ টাকা।

রাজধানীর মিরপুর-১১ নাম্বার থেকে নয়াপল্টনে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন রকিবুল ইসলাম। তিনি জানান, একজন পরিচিত ডাক্তারের অধীনে তার বোন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আজ রোগীর খালি পেটে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা। তাই সকালে অনেকক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে কোনো যানবাহন না পেয়ে চারশ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে তাদের। অন্য সময় এ পথে তাদের ভাড়া লাগত আড়াইশ থেকে তিনশ।

রিকশাচালকরা বলছেন, রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় আজ রিকশার চাহিদা বেশি। আবার রাস্তায় যানজটও না থাকায় সময় বেশি লাগলেও যেকোনো দূরত্বে যেতে রাজি হচ্ছেন তারা। তাই অন্য দিনের চেয়ে আজ কোনো-কোনো চালক একটু বেশি ভাড়া আদায় করছে।

রিকশাচালক মোহাম্মদ রাশেদ জানান, সকাল ৮টার দিকে রাস্তায় বের হয়েছেন। অন্য দিনের তুলনায় আজকে যাত্রী বেশি ছিল। বেলা ১১টার পর্যন্ত বাড্ডা, শাহজাহানপুর, পুলিশ প্লাজা এলাকায় ভাড়া নিয়ে গেছেন, তাতে আয় হয়েছে চারশ টাকা। অন্য দিন এ সময়ে তার দুইশ টাকার মতো ইনকাম হতো।

আরেক রিকশাচালক নাদিম হোসেন জানান, সকাল ৯টা থেকে তিনি রিকশা চালাচ্ছেন। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি সাড়ে চারশ টাকার মতো ভাড়া পেয়েছেন। নাদিম জানান, অন্য দিন এ সময়ে তার দুই থেকে আড়াইশ টাকার মতো আয় হতো। আজ রাস্তায় যাত্রী বেশি থাকায় ভাড়াও একটু বেশি পেয়েছেন।

রিকশার মতো ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলেও সাধারণ সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছেন চালকরা। মোটরসাইকেলে রাজধানীর মৌচাক মোড় থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত একশ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছেন তানবির হাসান। তিনি জানান, অন্য সময়ে তিনি গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। তখন ভাড়া লাগে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর মোটরসাইকেলে এলে সেটা ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ হতো। কিন্তু আজ রিকশা ভাড়া দেড়শ টাকা চাওয়ায় মোটরসাইকেলে একশ টাকা দিয়ে এসেছেন।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক আতিকুল ইসলাম। তিনি জানান, রাজধানীর কলাবাগান থেকে মহাখালী আসতে তাকে মোটরসাইকেলের ভাড়া দিতে হয়েছে দুইশ টাকা। অন্য সময় গাড়িতে আসতে তার ভাড়া লাগত ২০ থেকে ৩০ টাকা। জরুরি কারণে মোটরসাইকেলে এলে এক থেকে ১২০ টাকার মতো ভাড়া গুনতে হতো।

এএইচআর/এএসএস/এসএসএইচ