বাবা বলেছিলেন, ‘সাবধানে থাইকো, আমি মজা নিয়ে আসব’। কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই বাবার কথা মনে করছিল রাজধানীর মগবাজারে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে নিহত আবুল কাশেমের মেয়ে মিম (৮)। 

রোববার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের সময় আবুল কাশেম আজমেরী পরিবহনের স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন। দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার পথেই তিনি মারা যান। প্রথমে পরিচয় না পাওয়া গেলেও পরে স্বজনরা এসে তার মরদেহ শনাক্ত করেন।

নিহতের মেয়ে মিম সোমবার (২৮ জুন) ঢাকা পোস্টকে বলে, বিকেলে মায়ের সঙ্গে বাবার কথা হয়েছিল। তখন আমার সঙ্গেও কথা হয়। তখন বাবা আমাকে বলেছিলেন, সাবধানে থাইকো, আমি তাড়াতাড়ি আসব মজা নিয়ে। বাবা তোর আর মজা নিয়ে ফিরে আসবে না। কোথায় পাব বাবাকে। এখন কে আমাদের দেখবে? কে আমাকে মজা কিনে দেবে?

সে জানায়, আমিনুল ইসলাম মডেল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সে। তার বাবা অনেক ঋণ করে গাড়িটি কিনেছিলেন। 

আবুল কাশেমের স্ত্রী সোহাগী বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ডান পা প্যারালাইজড হয়ে আছে দু বছর হলো। অনেক কষ্ট করে ১৩ লাখ টাকা ঋণ করে একটি বাস কিনেছিলেন আমার স্বামী। বলেছিলেন ঋণ শোধ হলে ইন্ডিয়া নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এখনও ঋণ শোধ হয়নি।

তিনি বলেন, সব বোঝা আমাকে দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমার স্বামী। বিকেলে ফোন দিয়ে মেয়ের খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। বলেছিলেন তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। কিন্তু তিনি আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না। এ ঋণ আমি কীভাবে শোক করব? আমার তো আর কিছু রইল না।

নিহত কাশেমের স্ত্রীর বড় ভাই মিন্টু মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল বিকেলে আমার বোনের সঙ্গে কথা হয়। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ ছিল। টিভিতে খবর দেখে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজতে থাকি। আমরা কোনোভাবেই তার অবস্থান জানতে পারছিলাম না। পরে সকালে আমরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তার মরদেহ শনাক্ত করি। আমার বোনটার এক পা প্যারালাইজড হয়ে আছে। বলেছিলেন,  ঋণ শোধ হলে আমার বোনকে নিয়ে ইন্ডিয়া যাবেন চিকিৎসা করাতে। সে আশা আর পূরণ হলো না। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

এসএএ/আরএইচ