বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন

রাজধানীর মগবাজারে ওয়্যারলেস গেট এলাকায় আকস্মিকভাবে সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত তিনতলা ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর।

সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির সামনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ভবনটি সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী। মেরামত করেও ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর ওপরে আরও দুটি ফ্লোর রয়েছে। বর্তমানে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে।

সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এই ভবনে যেন কেউ প্রবেশ না করেন। পরবর্তীতে কোনো ধরনের বিপদের সম্মুখীন যাতে কেউ না হয়।

ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি

তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কারণে আশপাশে যে ভবন ছিল, সেগুলোর কাচ ভেঙে পড়া বা দেয়ালে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। ভবনের মালিককে বিষয়টি অবগত করা হবে। ভবনটি ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পক্ষ থেকে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আজ তদন্তের প্রথম দিন। কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে তা তদন্ত অগ্রসর হলে বলতে পারব। ঘটনাস্থল থেকে আমরা আলামত সংগ্রহ করছি। ভবন মালিক, রেস্টুরেন্ট মালিক ও ব্যবহারকারীদের বক্তব্য শুনব।

তিনি আরও বলেন, এর আগে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল, সেটিও এখানকার সমপর্যায়ের উপাদান থেকে ঘটেছিল। নারায়ণগঞ্জ ও মগবাজারের ঘটনার আলামতের মিল রয়েছে। আমরা মগবাজারের ঘটনাটিও তেমন অনুমান করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। ঘটনাস্থল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে তথ্য ও আলামত সংগ্রহ করছি। এই তথ্যগুলো একত্রিত করে পর্যালোচনার মাধ্যমে আমরা একটি সিদ্ধান্তে যেত পারব।

ঝুঁকি এড়াতে ভেঙে ফেলতে হবে ভবনটি

এর আগে ঘটনাস্থলে কথা হয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী পরিচালক (ঢাকা) ছালেহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি জমে থাকা গ্যাসে ভবনটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছিল। কোনো স্পার্ক হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের তদন্ত দল আলামত সংগ্রহ করছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সংগৃহীত আলামত বিশ্লেষণ শেষে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

অন্যদিকে মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা কি না তা তদন্ত করছে পুলিশ। বিস্ফোরণের সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধানে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ও ক্রাইম সিন ইউনিট।

সোমবার (২৮ জুন) দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা ক্রাইম সিন ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিস্ফোরণটি মারাত্মক ছিল। প্রাথমিকভাবে নানা কারণ উঠে এলেও বিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনও নিশ্চিত না। বিস্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখা হবে। আমাদের দল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এরিয়া কর্ডন করে আলামত সংগ্রহ করছেন।

রোববারের ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ এখন পর্যন্ত সাতজন মারা গেছেন। দগ্ধ হয়ে ১৭ জন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায়, মোট ৬৬ জনের হাসপাতালে ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে অর্ধশতাধিক আহত ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

জেইউ/এমএইচএস