করোনাকালীন সময়ে সুস্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবাই করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করাসহ ৬ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

শনিবার (১৭ জুলাই) অনলাইনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং সাদাকাহ ফাউন্ডেশন অব ইউএসএ আয়োজিত ‘করোনা মহামারিতে কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষক’ আলোচনা সভা থেকে এসব সুপারিশ জানানো হয়।

পবার অন্যান্য সুপারিশগুলো হলো : বর্জ্যগুলো আলাদাভাবে প্যাকেটে তুলে ভালোভাবে মুখ বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা কিংবা মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সচেতনতা সৃষ্টি; সঠিক ও সুষ্ঠু নিয়মে পশু কোরবানি দেওয়ার জন্য জনগণকে প্রশিক্ষিত করা; পশুর হাড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করার জন্য ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা এবং আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা, যাতে একদিকে পরিবেশ উন্নত হয়, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়; পশুর হাটের গোবর, উচ্ছিষ্ট, গো-খাদ্য, পাকস্থলীর হজমকৃত বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রাখা এবং জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা এবং পর্যাপ্ত স্লাটারিং হাউসের ব্যবস্থা করা এবং সেটা ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা।

আলোচনায় ক্যালিফোর্নিয়ার নর্থ সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ফেলো আব্দুস সালাম ভূঁইয়া বলেন, করোনার সংক্রমণ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তাই এবারের কোরবানিতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। যেটা আমার সবসময় বলে থাকি, যত্রতত্র নয়, একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পশু জবাই করতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে যেখানে সেখানে কোরবানির পশু জবাই দেওয়া হয়, যা পরিবেশ নষ্ট করে। আমি মনে করি, এজন্য স্লাটারিং হাউসের ব্যবস্থা করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, পশু কেনার সময় ১৮ বছরের কম এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের হাটে যাওয়া মোটেও ঠিক হবে না। যারা টিকা নিয়েছেন তারা হাটে যাবেন এবং পশু স্পর্শ করার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। পশুর ক্রেতা এবং বিক্রেতা- উভয়কেই মাস্ক পরিধান করতে হবে। অবশ্যই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। কোরবানির পর জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে এবং বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট গর্তে ফেলে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি অবশ্যই কোরবানির পশুর সংস্পর্শে আসবেন না।

ইসলামিক ব্যক্তিত্ব সাদিকুর রহমান আজহারী বলেন, সওয়াব লাভের আশায় কোরবানি করে বর্জ্য দিয়ে পরিবেশ দূষণ করছি কি না, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আমরা অনেকে মনে করি, পশুটা জবাই করে গোশত ভাগাভাগির পরেই দায়িত্ব শেষ। এটা ঠিক নয়। অবশ্যই জবাই করার জায়গাটা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, যার অবহেলা করা ইসলাম বিরুদ্ধ। উঁচু জায়গায় পশু কোরবানি দিলে অনেক দূর পর্যন্ত নিচু জায়গা দূষিত হয়ে যায়। তাই জায়গাটা সমতল হওয়া চাই। এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে মসজিদের ইমাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, কোরবানির প্রতিটি বর্জ্যকেই কাজে লাগিয়ে তা সম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব। পশুর চামড়া, হাড়, শিং, পাকস্থলী, মূত্রথলি, রক্ত, গোবর, পশুর উচ্ছিষ্ট, নাড়িভুঁড়িসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করে বিদেশে রফতানি করে কোটি কোটি টাকা আয় করা যায়। রক্তসহ অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করতে অনেকে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করেন, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এটা পরিহার করতে হবে। গোবর আলাদা স্থানে সংরক্ষণ করে সেটা দিয়ে সার বানানো যায় এবং বিভিন্ন নার্সারি, ছাদ বাগানে, বাসার নিচের বাগানে ব্যবহার করা যায়।

আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন সাদাকাহ ফাউন্ডেশন অব ইউএসএর প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, পবার সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ।

এমএইচএন/এসকেডি