যৌন অপরাধে কিশোর-তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ায় উদ্বিগ্ন মহিলা পরিষদ
ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন অপরাধে কিশোর-তরুণদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে সাইবার মাধ্যমের ব্যবহার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতির শুরুতেই রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘটনার সাথে জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ফলোআপ সংবাদ এবং ঘটনার শিকার স্কুলছাত্রীর পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার শিকার স্কুলছাত্রী রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেল এর শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর পরিবার থানায় মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার শিকার স্কুলছাত্রীর পরিবার ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেন। ফারদিন ইফতেখার দিহান ঘটনার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা, গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানায়। নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মহিলা পরিষদ ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন অপরাধে কিশোর-তরুণদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে সাইবার মাধ্যমের ব্যবহার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে কিশোর-তরুণের মানসিক বিকাশ উপযোগী সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধির জন্যও দাবি জানাচ্ছে। ধর্ষণ, যৌন অপরাধের ঘটনা প্রতিরোধে পাঠ্যসূচিতে যৌন ও প্রজনন শিক্ষার বিষয় অন্তর্ভূক্ত করাসহ এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে ডলফিন রোডে নিজ বাসায় নিয়ে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন ওরফে শাহনূরীকে ধর্ষণ করেন দিহান। পরে আনুশকা অচেতন হয়ে গেলে তাকে কলাবাগানের আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপালে নিয়ে যান দিহান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনুশকাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় দিহান ও তার তিন বন্ধুকে আটক করে পুলিশ।
ঘটনার দিন রাতে কালবাগান থানায় দিহানকে আসামি করে মামলা করেন আনুশকার বাবা মো. আল আমিন। আনুশকাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ২ ধারায় মামলাটি করা হয়। পরেরদিন শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) দিহানকে আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে আনুশকার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেসনিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে আনুশকার মৃত্যু হয়েছে। তার যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ দুই দিক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ময়নাতদন্তে দেহের দুই অংশেই আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে ধস্তাধস্তির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না তা জানার জন্য নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। ঘটনাস্থলে একাধিক ব্যক্তি ছিল। তাদের ডিএনএ নমুনা এবং ভিসেরাও সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় শুক্রবার রাতে দিহানের তিন বন্ধুকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
জেইউ/এইচকে