দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবি নোটিশে হাজির হননি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ও সাবেক পরিচালক আরেফিন সামসুল আলামিন।

রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতায় তাদের তলব করা হয়েছিল।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) সকালে তাদের হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা হাজির হননি বলে দুদকের একটু সূত্র জানিয়েছে।

দুদক জানায়, পিকে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি থাকা অবস্থায় তার আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে আরও বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক বানান এবং একক কর্তৃত্বে অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে পিপলস লিজিংসহ বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির টাকা বিভিন্ন কৌশলে বের করে আত্মসাৎ করেন। পিপলস লিজিংয়ে আমানতকারীদের ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করেন এবং ওই কোম্পানিকে পথে বসিয়েছেন। এছাড়া দেয়া শিপিং লিমিটেডকে ৩০ কোটি টাকা এবং এমটিবি মেরিন লিমিটেডকে ৩০ কোটি টাকা জামানত না দিয়েই ঋণ দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তলব করা হয়।

দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তাদের তলব করেন। মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ ও এমটিবি মেরিন লিমিটেডের মালিক নওশের-উল ইসলাম ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম এবং এমটিবি মেরিন লিমিটেডের মালিক সঞ্জিব কুমার হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় এরইমধ‌্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তবে মামলা করার আগেই লাপাত্তা তিনি। পরে দেশে আসার কথা বলেও আর আসেননি। এরইমধ্যে গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানি দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল।

ওই মামলার এজাহারে প্রশান্ত কুমার হালদার ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক ১ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার লেনদেনের বিষয়ে তথ্য ছিল।

দুদক বলছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার।

এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বেশ আগেই অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য অনুরোধ করে। যেখানে অনিয়ম ও জালিয়াতির বিভিন্ন চিত্র উঠে আসে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের বিষয়ে অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, পিকে হালদার ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয় প্রায় ১ হাজার ৬শ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ১ হাজার ২শ কোটি টাকা, পিকে হালদারের হিসাবে ২৪০ কোটি টাকা এবং তার মা লীলাবতী হালদারের হিসাবে জমা হয় ১৬০ কোটি টাকা। তবে এসব হিসাবে এখন জমা আছে মাত্র ১০ কোটি টাকার কম।

অন্যদিকে পি কে হালদার এক ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বের করে নিয়েছেন। এসব টাকা দিয়েই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা কেনা হয়। তবে ঋণ নেওয়া পুরো টাকার হদিস মিলছে না।

 

আরএম/জেডএস