মেট্রোরেলের গ্রাফিক

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেল চালুর পর পুরো পথ অতিক্রম করলে একজন যাত্রীর ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৮ টাকা ২৫ পয়সা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়ার হার প্রস্তাব করা হয়েছে দুই টাকা ৪০ পয়সা। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) চলতি মাসে এই ভাড়ার হার প্রস্তাব করেছে।

ডিটিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালক ও মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের সাত সদস্যের কমিটির প্রধান খন্দকার রাকিবুর রহমান সোমবার (১১ জানুয়ারি) রাতে ‘ঢাকা পোস্ট’কে বলেন, ‘আমরা ভাড়ার হার প্রস্তাব করেছি। সেটা চূড়ান্ত করতে আরও বৈঠক করব অংশীজনদের নিয়ে।’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুনে দেশের প্রথম মেট্রোরেল রুটটি চালুর জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটের উড়াল রেলপথটিতে শুরুর স্টেশন থেকে শেষ অংশ পর্যন্ত ৪০ মিনিটে অতিক্রম করতে পারবেন যাত্রীরা। রেলপথে থাকবে ১৬টি স্টেশন। পুরো রেলপথ ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রতিটি ট্রেনে ছয়টি কোচ থাকবে। এর মধ্যে একটি থাকবে নারীদের জন্য। অন্যগুলোয় নারী ও পুরুষ যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারবেন।

এই রেলপথ নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার ঋণ, দৈনিক খরচ, পরিচালন ব্যয়, কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় পর্যালোচনা করে ভাড়ার হার প্রস্তাব করেছে কমিটি।

চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ

প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের মে মাসে জারি করা প্রজ্ঞাপনে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাসের প্রতি কিলোমিটারে সর্বোচ্চ ভাড়া এক টাকা ৪২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ঢাকায় বাস ভাড়া বাড়ানো হলেও পরবর্তী সময়ে আগের ভাড়া বহাল রাখার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

এদিকে, মেট্রোরেলের জন্য যে ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে তা চলমান বাস ভাড়ার চেয়ে কিলোমিটারে প্রায় এক টাকা বেশি।

মেট্রোরেলের জন্য প্রস্তাবিত এ ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ‘ঢাকা পোস্ট’কে বলেন, ‘রাজধানীতে বাস ভাড়া কিলোমিটারে দুই টাকার চেয়ে কম। মেট্রোরেলে এই ভাড়া (দুই টাকা ৪০ পয়সা) চূড়ান্ত করা হলে বাস মালিকরা ভাড়া বাড়াতে সরকারকে চাপ দেবেন। এ কারণে আমরা কমিটির কাছে সহনীয় ভাড়ার হার প্রস্তাব করব- যাতে প্রথম মেট্রোরেল গণবান্ধব পরিবহন হয়ে ওঠে।’

নির্মাণাধীন মেট্রোরেল

মেট্রোরেলে ভাড়া নির্ধারণ কমিটির পর্যালোচনাপত্রে দেখা গেছে, এই রেলপথ পরিচালনার জন্য দৈনিক ব্যয় হবে দুই কোটি ৩৩ লাখ পাঁচ হাজার ৭৪১ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য ব্যয় ধরে তা হিসাব করে ভাড়ার এই হার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। বাকি অর্থের জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড-বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে এই রেলপথ জসিম উদ্দিন রোডের একটি অংশ হয়ে দক্ষিণ দিক দিয়ে সার্কুলার রোড সংলগ্ন কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে পর্যন্ত নির্মাণ পথ বাড়ানো হবে। তখন ভাড়ার হার আরও বেড়ে যাবে বলে কমিটির একাধিক সদস্য ‘ঢাকা পোস্টকে’ জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত মেট্রোরেলের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। বর্তমানে এ অংশের পরিসেবা স্থানান্তর, চেক বোরিং, ট্রায়াল ট্রেঞ্চ, টেস্ট পাইল ও স্থায়ী বোর্ড পাইল সম্পন্ন হয়েছে। ১০৬টি পিয়ার কলামের মধ্যে ১০৫টি পিয়ার কলাম সম্পন্ন হয়েছে। ২০৩টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ১২৮টি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ফার্মগেট স্টেশনের উপ-কাঠামো নির্মাণকাজ চলছে। তিন দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ৯০ মিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। এই প্যাকেজের সার্বিক অগ্রগতি ৫২ দশমিক ১১ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

পিএসডি/এফআর