৫০ বছরের বেশি বয়সের সিদ্দিকুর রহমান। সকাল সকাল জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হাজির ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন আলাতুনেচ্ছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। টিকা নেওয়ার জন্য সকাল থেকে কেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বয়স এবং এলাকা যাচাইবাছায়ের পর টিকা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পেরেছেন তিনি। 

ভেতরে এখন টিকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছেন সিদ্দিকুর রহমান। এক এক করে নাম ধরে ডাকছেন স্বেচ্ছাসেবীদের দল, আর চার-পাঁচ জনের পরই টিকা নিতে ডাক পড়বে সিদ্দিকুর রহমানের। আর এই সময়ের জন্যই সকাল থেকে অপেক্ষা ছিল তার।

সোমবার (৯ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আলাতুনেচ্ছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দৃশ্য ছিল এটি। কেন্দ্রের বাইরেও পুরুষ, মহিলারা পৃথক লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের ভিতর থেকে স্বেচ্ছাসেবী দলের দুজন সদস্য এসে বাইরে অপেক্ষমাণ টিকাগ্রহীতাদের জানিয়ে দিলেন, আজ আর হবে না। ভেতরে ইতিমধ্যে ৩৫০ জনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্যে টিকা গ্রহীতাদের ঢুকিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজকের মতো নতুন করে কাউকে কেন্দ্রে ঢুকানো হবে না। 

স্বেচ্ছাসেবীদের এমন ঘোষণার পর ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেল অপেক্ষমাণদের। তাদের মধ্যে একজন ওয়াহিদুর রহমান। তিনি বলেন, সকাল থেকে টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। এখন এসে তারা বলে- আজকের লিমিট শেষ। তাহলে আমার মতো আরও শত শত মানুষের যে সময় নষ্ট হলো- এই সময়ের মূল্য কে দেবে? 

কথা হয় কেন্দ্রের ভেতরে থাকা একজন স্বেচ্ছাসেবী ফরিদ আহমেদের সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এই কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩৫০ জনের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়ালে তাদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, আজ আর হবে না, আপনার আগামীকাল আসেন। মানুষ না বুঝে তর্ক করছে। টিকার বিষয়টা তো আমাদের হাতে নেই। যে সংখ্যক টিকা আমরা পেয়েছি তার সবগুলো টিকাই আমরা এলাকাবাসীকে প্রদান করে দিচ্ছি। 

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম গণি বলেন, আমরা এই কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩৫০ জনকে টিকা প্রদান করছি। আমরা ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রাধান্য দিচ্ছি, তাদেরকে আগে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে স্বেচ্ছাসেবীদের একটি বড় টিম কাজ করছে। যারাই লাইনে দাঁড়িয়ে আসছেন, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। আশা করছি সুশৃঙ্খলভাবে সবাই টিকা পাবেন। 

কেন্দ্রে বাইরের লাইন পেরিয়ে ভেতরে অপেক্ষমাণদের তালিকায় অবস্থান করছেন এই এলাকার বাসিন্দা নজির উদ্দিন। তিনি বলেন, সকাল বেলায় সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছি। এরপর কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের পর আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে এখানকার ছেলেরা আমার নিবন্ধন করে দিয়েছে। যাদের নিবন্ধন হয়েছে তারা কেন্দ্রের ভেতরে সিরিয়ালে চেয়ারে বসে আছে। এক এক করে নাম ধরে ডাকলে এরপর টিকা প্রদান করছে। আমার মতো এখানে শত শত মানুষ এভাবেই টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের সিরিয়াল আসলেই আমরা টিকা নিতে পারব। 

দীর্ঘ অপেক্ষার পর সদ্য প্রথম টিকা নেওয়ার কাজ শেষ করে কেন্দ্র থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলেন আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, সকালে টিকা নেওয়ার জন্য সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছিলাম আমি আর আমার ভাতিজা। কিন্তু এখানে ৫০ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে শুধু আমার নিবন্ধন করে দিয়েছে। ভাতিজারটা হয়নি। সকালে আসার পর প্রথমে বাইরে একটা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এরপর কেন্দ্রে ভেতরে এসে নিবন্ধনের পর ফের চেয়ারে বসে সিরিয়ালে দাঁড়াতে হলো। একের পর এক নাম ধরে ডেকে টিকা দিতে দিতে আমার সিরিয়াল এসেছে। অপেক্ষা করাসহ টিকা নিতে অনেক সময় লেগে গেল।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গণটিকা কার্যক্রম গতিশীল করতে সারাদেশে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন। গত শনিবার (৭ আগস্ট) সারাদেশের ৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভায় এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম শুরু হয়। সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড ও বিভিন্ন অঞ্চলভেদে ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই ক্যাম্পেইন।

এএসএস/এইচকে