নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চরচানন্দিতে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সন্তানদের সামনে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

মহিলা পরিষদের দাবি, সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, হাতিয়াসহ নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক একই কায়দায় নারীর ওপর বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে এ জেলাকে চিহ্নিত করে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এ দাবি জানানো হয়।

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চরচানন্দিতে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সন্তানদের সামনে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং এর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর হাতিয়ার চরচানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে স্থানীয় বখাটে জিয়া ওরফে জিহাদ, ফারুখ, এনায়েত, ভুট্টো মাঝি ও ফারুক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সন্তানদের সামনে বিবস্ত্র করে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে মুঠোফোনে বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে। এ সময় ঘরের আসবাবপত্রও ভাঙচুর করা হয়। পরে বখাটেরা মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

গত ৪ জানুয়ারি ভিকটিম হাতিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলা গ্রহণ করেনি বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়। পরের দিন অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী।

বিবৃতিতে মহিলা পরিষদের দুই নেত্রী আরও উল্লেখ করেন, ‘সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, হাতিয়াসহ নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক একই কায়দায় নারীর ওপর বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণসহ সামজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটে যাচ্ছে যা আমদেরকে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। এ জেলাকে নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারসহ শাস্তির লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঘটনার শিকার গৃহবধূ ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতানীতি গ্রহণসাপেক্ষে দ্রুত বিচার নিশ্চিতে আশু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সারাদেশে সংঘটিত নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

জেইউ/এমএআর/