ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তিন দেশের সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকটি মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার পর শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে অনলাইনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তিন দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকটির দেবে বাংলাদেশ। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার লু ঝা উই ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব আই উ চান নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় নিয়ে চলতে পারে বলে জানা গেছে।

বৈঠকে বাংলাদেশ একটি গ্রাম বা অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দেবে। আর সেটা যত দ্রুত সম্ভব শুরু করার বিষয়েও তাগিদ দেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের এলোমেলোভাবে চিহ্নিত না করে একটি গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমে ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তাব দেবে ঢাকা। শুধু তাই নয়, আগামী বর্ষার আগে যে করেই হোক প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে জোর দেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিক্ষিপ্ত তালিকা ধরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেয়ে একটি গ্রাম বা অঞ্চলের যে পরিমাণ লোকসংখ্যা আছে তাদের পুরোপুরি ফেরত পাঠানো বাস্তবসম্মত হবে। এতে রোহিঙ্গারাও উৎসাহিত হয়ে ফিরে যাবেন। সেই লক্ষ্যে এগোতে চায় সরকার। তাই বৈঠকেও এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরবে ঢাকা।

এর আগে, ২০১৯ সালে চীনের উদ্যোগে প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসেছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সে বৈঠকের পর নেইপিদোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি তারা। পরে ২২ অক্টোবর চীনের পক্ষ থেকে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বার্তা আসে। সেদিন সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে নতুন করে আরও দুই লাখ ৩০ হাজার জনের তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এর মধ্যে ২৮ হাজার জনকে নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকার করেছে দেশটি। তালিকার ১৪ হাজার জনের তথ্য তাদের ডাটাবেজেই নেই বলে জানিয়েছে মিয়ানমার।

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্ট-কে জানান, সম্প্রতি মিয়ানমারকে এই তালিকা হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। দুই লাখ ৩০ হাজারের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই-বাছাই করে সেখান থেকে ২৮ হাজার জনকে তাদের বাসিন্দা বলে স্বীকার করেছে মিয়ানমার। এদের মধ্যে ১৪ হাজার রোহিঙ্গার নাম দেশটির ডাটাবেজেই নেই বলে ঢাকাকে জানিয়েছে নেইপিদো।

যাচাই-বাছাই করাদের মধ্যে ৩৫০ জনকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

গত বছর দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।

এমএইচএস